বিশ্ব রাজনীতির উত্তাপে যখন তেলের বাজার টালমাটাল, তখন হঠাৎই কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস এনে দিল ট্রাম্পের ঘোষণা। রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ৫০ দিনের সময়সীমা দিয়ে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত কিছুটা পিছিয়ে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এতে করে বাজারে সরবরাহ সংকটের আশঙ্কা কমে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম হ্রাস পেতে শুরু করেছে। খবর রয়টার্স
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) লন্ডনভিত্তিক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২৯ সেন্ট বা ০.৪ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৬৮.৯২ ডলার।
অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম ৩৫ সেন্ট বা ০.৫ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৬৬.৬৩ ডলার। আগের দিন এই দুটি মানদণ্ডেই তেলের দাম ১ ডলারের বেশি কমেছিল।
ফিলিপ নোভা’র জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক প্রিয়াঙ্কা সচদেব বলেন, ‘রাশিয়ান তেলের ওপর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ট্রাম্পের কিছুটা নমনীয় অবস্থান বাজারে স্বস্তি দিয়েছে। তবে তার প্রস্তাবিত শুল্কনীতি এখনো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫০ দিনের সময়সীমা ঘোষণার ফলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে হয়তো নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি আরোপ নাও হতে পারে। ফলে সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ কমে আসে এবং বাজারে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
বিশ্বখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএনজি তাদের এক বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘যদি ট্রাম্প বাস্তবেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেন, তাহলে বিশ্ব তেলবাজারের চিত্র নাটকীয়ভাবে পাল্টে যাবে। রাশিয়ার প্রধান তেল ক্রেতা চীন, ভারত ও তুরস্ককে তখন নতুন করে হিসাব কষতে হবে।’
এর আগে শনিবার ট্রাম্প ঘোষণা দেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মেক্সিকো থেকে আমদানিকৃত অধিকাংশ পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলোও শুল্কের আওতায় পড়তে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক আরোপের এ ধারা অব্যাহত থাকলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। এতে তেলের চাহিদা কমে গিয়ে বাজারে দর আরও কমতে পারে।
এদিকে ওপেক-এর সেক্রেটারি জেনারেল রাশিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আগামী তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা ‘খুবই শক্তিশালী’ থাকবে। ফলে সাময়িকভাবে হলেও বাজার ভারসাম্যপূর্ণ থাকবে বলে তার ধারণা।
অন্যদিকে, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাচস সোমবার জানায়, তারা ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য তেলের মূল্য পূর্বাভাস বাড়িয়েছে। রাশিয়ার উৎপাদন হ্রাস, সরবরাহ বিঘ্ন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মজুদ কমে যাওয়াই এ সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ।