ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস,বাংলাদেশে ২৪ জানুয়ারি পালিত হয় । পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের এই ২৪ জানুয়ারি পূর্ব বাংলার (তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান) সংগ্রামী ছাত্র জনতা পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর পুলিশী নির্যাতন, দমন-পীড়ন ও সান্ধ্য আইন উপেক্ষা করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত হন নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান ৷ এই ঘটনায় ছাত্র জনতা আরও রুদ্ররোষে ফেটে পড়ে, তৈরি হয় গণঅভ্যুত্থান।
২৪ জানুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখে ঢাকা শহরে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন নবকুমার ইন্সটিটিউশনের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক এবং রিকশাচালক রুস্তম আলী। তাঁদের হত্যাকাণ্ডের পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে এবং এটি দ্রুত দেশের অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিশাল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে আইয়ুব খান সরকারকে তার পতনের দিকে ঠেলে দেয়।
১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব খানের শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের 'ছয় দফা' আন্দোলন শুরু হবার পর, এটি আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে এবং ১৯৬৯ সালের প্রথম দিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ, ধর্মঘট এবং সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী কয়েক মাসে দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ছাত্র-যুবকরা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিতে থাকে, এবং অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীও আন্দোলনকে সমর্থন জানায়। ১৯৬৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও চাপ বাড়তে থাকে এবং অবশেষে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
বাংলাদেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিনটি শুধু এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের স্মৃতি নয়, এটি একটি মাইলফলক যা বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা এবং স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ঐতিহ্যকে চিহ্নিত করে। গণঅভ্যুত্থান দিবসের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
গণঅভ্যুত্থান দিবস বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস, যারা গণতন্ত্রের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি ও তা রক্ষার জন্য অবিচল। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে দেশের জনগণ শিখেছিল যে, একতা, সংগ্রাম এবং প্রতিবাদে জনগণের শক্তি অদম্য।
গণঅভ্যুত্থান দিবস শুধু একটি ঐতিহাসিক দিন নয়, এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা সংগ্রামের এক মাইলফলক। এটি দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক। গণঅভ্যুত্থান দিবসে শহীদদের স্মরণ করা হয়, যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে গণতন্ত্র ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন।