রেল স্টেশনের কুলিদের দুর্দিন

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলস্টেশনে লুৎফর রহমান নামে এক কুলি শ্রমিক মালামাল ট্রেনে তুলছেন।

তাদের পরনে লুঙ্গি আর লাল রঙের কাঁধে গামছা ঝুলানো। কারো হাতে ট্রলি আবার কেউ বা দাড়িয়ে আছে খালি হাতে। রেল স্টেশনে গেলে এমন চিত্র দেখা যায়। তাদের উদ্দেশ্য যাত্রীদের সঙ্গে থাকা ভারি ব্যাগ মালামাল ট্রলি কিংবা কাঁধে কওে নিয়ে ট্রেনে পৌঁছে দেয়া বা ট্রেন থেকে মালামাল বাইরে এনে দেয়া। এছাড়াও মালবাহী ট্রেন থেকে বস্তা টেনে মহাজনদের গোডাউনে পৌঁছে দেয়ার কাজ করেন তারা। রেল স্টেশনের এ শ্রমিকদেও সবাই কুলি বলেই ডাকে। বর্তমান সময়ে রেল স্টেশনেই কুলি শ্রমিকদের বেশী দেখা যায়। স্টেশনের কুলিরা ট্্েরন আসার অপেক্ষায় থাকে। ট্রেন থামলেই শুরু হয় তাদের ছোটাছুটি। কে কার থেকে বেশী মালামাল বহন করতে পারে এমন প্রতিযোগীতার মধ্য দিয়ে তাদেও কর্মযজ্ঞ চলতে থাকে। স্টেশন এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কুলিদের দেখা মেলে। সারাদেশের রেল স্টেশন গুলোর মতো সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেল স্টেশনে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত স্টেশনের ভিতরে ও আশপাশে কুলি শ্রমিকের ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। 

সরেজমিনে উল্লাপাড়া রেল স্টেশন ঘুরে গায়ে লাল শার্ট পড়নে লুঙ্গি আর কাঁধে গামছা ঝুলানো কুলি শ্রমিকদের দেখা গেছে। তারা বড় ব্যাগ বা বস্তা নিয়ে কোন মানুষকে দেখছেন আর সে দিকে ছুঁটছেন। হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ করে ঠিক তখনই আবার তারা ছুটে যায় ট্রেনের দিকে। তাদের প্রতিযোগীতা শুরু হয় কে কার আগে ট্রেনের বগিতে উঠতে পারে। কে আগে যাত্রীদেও মালামাল ধরতে পারে। ট্রেনের সামনে গিয়ে তারা দাড়িয়ে থাকে এবং মালামাল বহনের জন্য যাত্রীদেও অনুরোধ করেন। যুগের পর যুগ মাসের পর মাস এভাবেই চলে আসছে তাদেও জিবন। শুধু উল্লাপাড়ার রেল স্টেশন নয় সারাদেশের ছোট বড় সব স্টেশনেই এমন চিত্র দেখা যায়। বড় বড় রেল স্টেশনের কুলিদের কাজের ব্যস্ততা থাকলেও উল্লাপাড়া রেল স্টেশনের শ্রমিকদের কাজের তেমন চাপ নেই। জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিদিন সিলসিটি,ধুমকেতু,একতা,চিত্রা,লালমনি পদ্মা ট্রেন উল্লাপাড়া স্টেশনে থামে। একসময় লোকাল ট্রেন এ স্টেশনে থামলেও দীর্ঘদিন যাবত লোকাল ট্রেনটি এখানে দাড়ায় না। যার ফলে যাত্রী সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কম।  যাত্রী কম থাকায় এখানকার কুলিদের অধিকাংশ সময় বেকার বসে থাকতে হয়। ফলে কুলিদের আয় রোজাগারের পরিমান খুবই সীমিত। ফলে তাদের সংসারে অভাব অনটন লেগে থাকে বলে স্টেশনের রেল শ্রমিকরা জানান। দীর্ঘদিন কুলির কাজ করা এসব শ্রমিকরা বলছেন, অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা এ কাজ করছেন। কেননা দীর্ঘ দিন ধরে এ পেশায় থাকায় তারা আর পেশা পরিবর্তন করতে পারছেন না। আবার অনেকের বয়স বেশী হওয়ায় নতুন কোনো কাজও করতে পারেন না। সারাদিন কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টকর।  

উল্লাপাড়া রেল স্টেশনে কাজের সন্ধানে ঘুরতে থাকা লুৎফর রহমানে নামে এক কুলি শ্রমিকের সাথে কুলিদের জিবনমান নিয়ে কথা হয়। তিনি  জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে উল্লাপাড়া রেল স্টেশনে কুলির কাজ করছেন। বর্তমানে স্টেশনে কাজ নেই বললেই চলে। সকাল থেকে স্টেশন চত্তরে ঘুরছেন আর যাত্রীদের অনুরোধ করছেন তাদের ব্যাগ মালামাল ট্রেনে তুলে দেয়ার। কিন্তু কেউ কুলি দিয়ে মালামাল বহন করছে না। এভাবেই প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে কাজের সন্ধান করেন তারা। যারা ব্যবসায়ীদের বস্তা বহন করে তাদের কিছুটা আয় রোজগার হয় আর অন্যদের আয় রোজগার খুবই কম। যখন লোকাল ট্রেন থামতো তখন স্টেশনে চত্তরে মোটামুটি মানুষের ভিড় থাকতো। সেসময় তাদের রোজগার ভালোই হতো। এখন স্টেশন চত্তরে শুয়ে বসে তাদের দিন কাটছে। স্টেশনে যাত্রী সংখ্যা কম হয়। আর যাও আছে তারা কুলি ডাকে না নিজেরাই নিজেদের মালামাল বহন করে। এমন একটা পরিস্থিতি হয়েছে যে কুলির কাজ করে সংসার চালানো দায় হয়েছে। রেল স্টেশনের পাশের ব্যবসায়ীরা বলেন, কুলি শ্রমিকদের অন্যান্য শ্রমিকের চেয়ে পরিশ্রম অনেক বেশী। তারা মালবাহী ট্রেন থেকে কাঁধে করে বস্তা বহনসহ ভারি ব্যাগ মালামাল ট্রেনে উঠা নামা করে। অধিক পরিশ্রমের ফলে স্টেশনের কুলিরা খুব তারাতারি কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। পরিশ্রমের তুলনায় কুলিদের আয় রোজগার খুবই কম। 

কুলি সর্দার হারুন অর রশিদ বলেন, তার বাবা রেল স্টেশনে কুলি সর্দার ছিলেন সেই সুবাধে তিনিও কুলির কাজ করেন এবং কুলিদের সর্দার হয়েছেন। কুলির কাজ করে ছেলে মেয়ের পড়ালেখা এবং সংসার চলে না। তাই তিনি স্টেশনের পাশে ভ্রাম্যমান পান সিগারেটের দোকান দিয়েছেন। দোকানের পাশাপাশি কুলির কাজ করছেন তিনি। এখন স্টেশনের কুলিদের রোজগার বলতে কিছুই নাই। এই সামান্য রোজগারে কুলিদের জিবনযাপন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন কুলিদের আয় কমেছে। একসময় দিনে ৫০০-৭০০ টাকা আয় রোজগার হতো। এখন ২০০-৩০০ টাকাও হয় না।  কোন কোন দিন ৫০-১০০ টাকা রোজগার হয়। যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাতে এই রোজগারে আমাদের সংসার চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। সব কিছুর দাম বাড়লেও কুলিদের দাম বাড়েনি। টিকতে না পেরে অনেকেই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। যারা এখনো এ পেশায় আছে তারা বাধ্য হয়েই আছে। 

 


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে অন্তত ৪ জন নিহত: বিবিসি বাংলা

দেশের বাজারে আজ যত দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ

ইসরায়েলের ২ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হুতির হামলা

রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জ, ১৪৪ ধারা জারি

জীবননগর সীমান্ত এলাকায়  শুটারগান ও গুলি উদ্ধার 

ইসির ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে আ. লীগের নৌকা প্রতীক

বেঁচে যাওয়া ৮ কোটি টাকা যেভাবে ফেরত পাচ্ছেন ৪৯৭৮ হাজি

গোপালগঞ্জে পুলিশের গাড়িতে আগুন

সংখ্যালঘু নির্যাতনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি: পুলিশ

ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র দেবে যুক্তরাষ্ট্র

১০

অভিনেতা বুলবুল আহমেদের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

১১

মুক্তি পেতে যাচ্ছে প্রভাসের রোমান্টিক ভৌতিক সিনেমা ’দ্য রাজা সাব’

১২