ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেছেন, খুনি হাসিনা ছাত্রশিবিরের উপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছিল। সর্বশেষ ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ পর্যন্ত করেছিল। কিন্তু শিবির থেকে গেছে মানুষের হৃদয়ে, আর হাসিনা পালিয়েছে দিল্লিতে। ছাত্রশিবির দেশের মানুষের ন্যায়ের পক্ষে, আজাদীর জন্য সবসময় লড়ে গেছে এবং যাবে। একই সঙ্গে শিবির যদি কোনো অন্যায় করে তাহলে আপনারা প্রতিবাদ করবেন। সকল ছাত্র সংগঠনকে অনুরোধ করব— ইসলামী ছাত্রশিবির যে নতুন ধারার রাজনীতি করছে তা আপনারাও অনুসরণ করেন।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবির কর্তৃক আয়োজিত নবীনবরণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ডাকসু ভিপি সাদেক কায়েম বলেন, ‘খুনি হাসিনা ছাত্রশিবিরের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছে এবং সর্বশেষ ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধও করেছিল। কিন্তু ছাত্রশিবির মানুষের হৃদয়ে থেকে গেছে এবং হাসিনা দিল্লিতে পালিয়েছে। ছাত্রশিবির দেশের মানুষের ন্যায়ের পক্ষে লড়ে যাবে।’
রাবি শিক্ষার্থীদের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে রাবি শিক্ষার্থীদের ত্যাগের গল্প শুনে বড় হয়েছি। বিগত ফ্যাসিবাদী সময়ে এই ক্যাম্পাসে গণরুম এবং গেস্ট রুমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনে করা হতো।শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হতো। কেউ ইসলাম চর্চা করলে তাকে ট্যাগিং করা হতো।’
রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ ছাত্রশিবির রাবি শাখা নবীনবরণ আয়োজন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আপনারা অনেকেই জানেন সেদিন কী হয়েছিল। সেই ঘটনা আমাদের এখনো আবেগতাড়িত করে। সেই নবীনবরণ অনুষ্ঠানকে অন্যান্য মতাদর্শের ভাইয়েরা বুমেরাং হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। নবীনবরণ আয়োজনের পর আমাদের চার ভাই আর ঘরে ফিরে যেতে পারেনি। তাদের আঘাতে আমাদের চারজন ভাই শহীদ হয়েছিলেন। তারা হলেন সাব্বির ভাই, হামিদ ভাই, আইয়ুব ভাই এবং জব্বার ভাই। তারা ইসলামি ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে সারা বাংলাদেশের প্রথম শহীদ হিসেবে আজও বিবেচিত। এ ঘটনার পর থেকেই প্রতি বছর ১১ মার্চ ছাত্রশিবির ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করে। এটি ছিল রাবি ছাত্রশিবিরের প্রতি জুলুমের ইতিহাস।
তিনি আরও বলেন, সেই দিন আজ পাল্টে গেছে। এই নবীনবরণ করতে গিয়ে আমার ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, আর আজ আমরা সেই অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পারছি—এজন্য আমরা মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। ১৯৮২ সালের পর আজই প্রথম আমাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে এত বড় নবীনবরণের আয়োজন করেছি। এর আগে ক্যাম্পাসের বাইরে আয়োজন করলেও সেখানে আমরা আমাদের বোনদের রাখতে পারিনি। কিন্তু এবার আমরা তা করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন বলেন, ‘অতীতে হলে উঠতে শিক্ষার্থীদের ৮-১০ হাজার টাকা দিতে হতো। সিট বাণিজ্যের মতো অনিয়ম বন্ধে প্রশাসন কড়াভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে। এই ক্যাম্পাসে অতীতে পদ্মা সেতুর জন্য টাকা উঠানো হয়েছিল, আর সেই টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মানুষ খুন হয়েছে। আগস্ট বিপ্লবের পর এ ধরনের সংস্কৃতি বদলে গেছে।’
তিনি মাদক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকার জন্য নবীনদের সতর্ক করে বলেন, ‘এই ক্যাম্পাস একসময় মাদকের আখড়া ছিল। গত সপ্তাহেও ১০ জনকে গাঁজাসহ আটক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে দেব না।’
অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদের উপহারসামগ্রী প্রদান, ক্যারিয়ার গাইডলাইন এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নমূলক পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডাকসু ও চাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম ও ইব্রাহিম হোসেন রনি, শিবিরের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও সমাজসেবা সম্পাদকসহ বিভিন্ন বিভাগের ডীন, হল প্রভোস্ট এবং প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী।