মিলনাড়ুর কারুর জেলায় তামিল সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা ও রাজনৈতিক দল তামিলাগা ভেত্রি কাজাগামের (টিভিকে) প্রধান থালাপতি বিজয়ের নির্বাচনি সমাবেশে পদদলিত হয়ে অন্তত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৫১ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
সমাবেশে প্রাণহানির ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন বিজয়। তিনি লিখেছেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙে গেছে; ভাষায় প্রকাশের অতীত যন্ত্রণা ও শোকে কাতর আমি। কারুরে প্রাণ হারানো আমার প্রিয় ভাই-বোনদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
কীভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা
শনিবার সন্ধ্যায় কারুর-ইরোড মহাসড়কের ভেলুসামাইপুরামে বিজয়ের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুমতি ছিল প্রায় ৩০ হাজার লোক সমাগমের, তবে স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ সেখানে ভিড় করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, রাত পৌনে ৮টার দিকে বিপুলসংখ্যক মানুষ একসঙ্গে মঞ্চের দিকে ধাবিত হন বিজয়কে এক নজর দেখার জন্য। মুহূর্তেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ধাক্কাধাক্কি ও হুড়োহুড়ির মধ্যে অনেকেই মাটিতে পড়ে যান, শ্বাসকষ্টে অচেতন হয়ে পড়েন। বিজয় বক্তৃতা মাঝপথে বন্ধ করতে বাধ্য হন এবং পুলিশকে সহায়তার জন্য আহ্বান জানান।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি এবং আহতদের প্রত্যেককে এক লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি আরও জানান, ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অরুণা জগদেশনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। জরুরি সেবার অংশ হিসেবে তিরুচিরাপল্লি ও সেলেম জেলা থেকে অন্তত ৪৪ জন চিকিৎসক কারুরে পাঠানো হয়েছে।
স্টালিন সাংবাদিকদের জানান, ‘এই দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ৫০ জনের বেশি। নিহতদের মধ্যে ১০ শিশু ও ১৮ নারী রয়েছেন।’
বিজয়ের জনপ্রিয়তা ও নিরাপত্তা প্রশ্ন
দীর্ঘদিনের সুপারস্টার হিসেবে বিজয়ের জনপ্রিয়তা তামিলনাড়ু রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ২০২৪ সালে দল গঠনের পর থেকে তিনি একের পর এক জনসভায় বিপুল জনসমাগম টানছেন। তার দল টিভিকে আগামী ২০২৬ সালের রাজ্য নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণা চালাচ্ছে।
তবে এই বিশাল জনসমাগম বারবার নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সৃষ্টি করছে। গত বছরও তার এক সমাবেশে অন্তত ছয়জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছিল। পুলিশের বিধিনিষেধ—যেমন সমাবেশের আকার সীমিত রাখা কিংবা ভেন্যু পরিবর্তন—সত্ত্বেও ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা দেখা যাচ্ছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শোক প্রকাশ করে এক্সে লিখেছেন, ‘কারুরে রাজনৈতিক সমাবেশে ঘটে যাওয়া এই দুঃখজনক ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’ তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
সূত্র: রয়র্টাসের