কথায় বলে, ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়। কিন্তু বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পরপর দুইদিনই করলেন এক ভুল। সিরিজের প্রথম ম্যাচের পর আজ (শনিবার) দ্বিতীয় ম্যাচেও টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যা দলের জন্য আত্মঘাতী হিসেবেই প্রমাণিত হয়েছে।
মজার বিষয় হলো, দুই ম্যাচেই পাকিস্তানি অধিনায়ক বাবর আজম জানিয়েছেন, তিনি টস জিতলে নিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত। সেটি কেনো? পরপর দ্বিতীয় ম্যাচে তা প্রমাণ করে দিয়েছে পাকিস্তানের বোলাররা। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করতে পেরেছে মাত্র ১০৮ রান।
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, এই উইকেটের চরিত্র বোঝা কঠিন। তবে আগে ব্যাট করে সুবিধাজনক সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে সেটি ডিফেন্ড করার পরিকল্পনা তার দলের। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি সেই পরিকল্পনা।
তিন নম্বরে নামা বাঁহাতি ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্তর ৪০ রান ব্যতীত আর কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি। আরও একবার হতাশ করেছেন দুই ওপেনার। উইকেটে থিতু হয়েও অল্পে সাজঘরে ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন ধ্রুব, নুরুল হাসান সোহানরা। ফলে পাকিস্তানের সামনে লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০৯ রানের।
ব্যাটিংয়ে নেমে শাহিন শাহ আফ্রিদির করা প্রথম ওভারের তিন বল ডট খেলে, পরেরটিতে সিঙ্গেল নিয়েছিলেন নাইম শেখ। লেগস্ট্যাম্পের ওপর করা চার নম্বর ডেলিভারিতে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন আরেক ওপেনার সাইফ।
আম্পায়ার প্রথমে আউট দেননি। তবে রিভিউ নিয়ে প্রথম সাফল্যের দেখা পায় পাকিস্তান। সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিজের অভিষেকে ৮ বল খেলে ১ রান করতে পেরেছিলেন সাইফ। আজ ফিরেছেন প্রথম বলেই।
সাইফ আউট হওয়ার পর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি নাইমও। তিনি সাজঘরে ফেরেন মোহাম্মদ ওয়াসিমের করা দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে আউট হওয়ার আগে ২ রান করেন নাইম।
দুই ওভারে দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর তৃতীয় ওভারটি ছিল বেশ ঘটনাবহুল। চার নম্বরে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে নিজের মুখোমুখি প্রথম বলেই ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা মেরেছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। সেটি হয়তো পছন্দ হয়নি পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার শাহিনের।
ঠিক পরের বলে আলতো স্ট্রেইট ড্রাইভ করেন আফিফ। ফলো থ্রু-তে সেই বলটি ধরেই আফিফের গায়ে ছুঁয়ে মারেন শাহিন। যা আঘাত করে আফিফের পায়ের অরক্ষিত অংশে।
টিভি রিপ্লে'তে দেখা গেছে, শাহিন থ্রো করার আগে পপিং ক্রিজের ভেতরেই ছিলেন আফিফ। তার মধ্যে রান নেওয়ার কোনো ইচ্ছাও ছিল না। পুরোপুরি অযথাই সেই থ্রো-টি করেছেন শাহিন।
শাহিনের থ্রো-টি পায়ের অরক্ষিত অংশে লাগার সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে শুয়ে পড়েন আফিফ। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছেন তিনি। মাটিতে পড়ে থাকা আফিফকে তুলতে এগিয়ে যান শাহিন নিজেও।
পরে দলের ফিজিও হুলিয়ান ক্যালেফেতো মাঠে এসে প্রাথমিক সেবা দেন আফিফকে। ব্যথানাশক স্প্রে করার পর উঠে দাঁড়ান চার নম্বরে নামা এ বাঁহাতি তরুণ ব্যাটার।
ঠিক পরের বলটিই আবার হয় বাউন্ডারি, তবে এবার লেগ বাই থেকে ৪ রান পায় বাংলাদেশ। সেই ওভার থেকে আসে সবমিলিয়ে ১২ রান। তিন ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ১৭ রান।
ঘটনাবহুল এই ওভারের পর পাওয়ার প্লে'র বাকি সময়টা ছিল বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেই। পরের তিন ওভারে বাংলাদেশ পায় আরও ১৯ রান। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, আর কোনো উইকেট পড়তে দেননি আফিফ ও শান্ত। ইনিংসের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ ওভারে আসে একটি করে বাউন্ডারি।
পাওয়ার প্লে শেষে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আনা হয় লেগস্পিনার শাদাব খানকে। তাকে দেখেশুনে খেলে ৬ রান নেন উইকেটে থাকা বাঁহাতি। শোয়েব মালিকের করা পরের ওভারে আরও এক চারের মারে আসে ৯ রান, যার সুবাদে পূরণ হয় দলীয় ফিফটি।
কিন্তু ঠিক পরের ওভারেই আউট হওয়ার জন্য যেন আত্মঘাতী পথ বেছে নেন আফিফ। শাদাবের স্ট্যাম্পের ওপর করা ডেলিভারি আগেই রিভার্স প্যাডেলের জন্য ব্যাট দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। খানিক ধীরে আসা সেই বল লাগে আফিফের ব্যাটের কানায়।
যার ফলে খানিক হাওয়ায় ভেসে সেটি জমা পড়ে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের বিশ্বস্ত গ্লাভসে, বিদায়ঘণ্টা বাজে আফিফের ২০ রানের ইনিংসের। একই ওভারে স্কুপ করতে গিয়ে প্যাডে লেগেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। আউটও দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন টাইগার অধিনায়ক।
অবশ্য সে যাত্রায় বাঁচলেও একবারের জন্যও সাবলীল মনে হয়নি মাহমুদউল্লাহকে। বেশ কয়েকবার অল্পের জন্য বেঁচে যান। শেষ পর্যন্ত হারিস রউফের করা ১৩তম ওভারে অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল খোঁচা মেরে আউট হন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ১৫ বলে ১২ রান।
অধিনায়ক ফিরে গেলেও আশার প্রদীপ হয়ে ছিলেন তিন নম্বরে নামা নাজমুল শান্ত। ততক্ষণে পাঁচ চারের মারে ৪০ রান করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু এরপর আর বাড়েনি শান্তর সংগ্রহ। শাদাবের করা ১৪তম ওভারে দারুণ এক ক্যাচের শিকার হয়েছেন তিনি।
লেগ স্ট্যাম্পের ওপর পিচ করা ডেলিভারি আলতো করে অনসাইডে খেলতে চেয়েছিলেন শান্ত। কিন্তু সেটি লাগে তার ব্যাটের সামনের কানায়। নিজের বাম দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ তালুবন্দী করেন শাদাব। ফলে শেষ হয়ে যায় শান্তর ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির সম্ভাবনা।
শুক্রবার বাংলাদেশকে ১২৭ রানের সংগ্রহ পর্যন্ত নেওয়ার বড় কারিগর ছিলেন শেখ মেহেদি হাসান, খেলেছিলেন ২০ বলে ৩০ রানের অপরাজিত ক্যামিও। আজ ব্যর্থ তিনি। বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন ৮ বলে ৩ রান করে।
এরপর আর বেশি কিছু করতে পারেননি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, নুরুল হাসান সোহানরা। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরা সোহান করেন ১১ রান। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে আমিনুল করেন ৮ রান। তাসকিন আহমেদের সংগ্রহ ২ রান।
পাকিস্তানের পক্ষে বল হাতে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি ও শাদাব খান। এছাড়া মোহাম্মদ ওয়াসিম, হারিস রউফ ও মোহাম্মদ নওয়াজের শিকার একটি করে উইকেট।