নীরবে শরীরে বাসা বাঁধে, প্রথমদিকে তেমন কোনো উপসর্গও দেখা যায় না তবু প্রাণঘাতী হতে একটুও দেরি করে না। এমনই এক মরণব্যাধি হলো ফুসফুস ক্যানসার। বিশ্বজুড়ে ক্যানসারজনিত মৃত্যুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় এই রোগে।
ধূমপানই এর প্রধান কারণ হলেও শুধুমাত্র ধূমপায়ী নয়, ধূমপান না করেও কেউ আক্রান্ত হতে পারেন এই রোগে। সময়মতো রোগ শনাক্ত না হলে এটি শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে আরও জটিল রূপ নেয়। তাই এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা, লক্ষণ চেনা, ঝুঁকি এড়ানো এবং প্রতিরোধের উপায় জানা আজকের দিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফুসফুুুুসের ক্যানসারের লক্ষণ: প্রাথমিক অবস্থার ফুসফুস ক্যান্সারের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। সাধারণত রোগটি অনেকটা অগ্রসর হওয়ার পর উপসর্গ দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে:
নতুন কাশি, যা ভালো হয় না, বুকব্যথা, অল্প হলেও রক্তসহ কাশি,গলা বসে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির মতো শ্বাসপ্রশ্বাসে বাঁশির শব্দ, যখন ক্যান্সার শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন দেখা দিতে পারে, হাড়ে ব্যথা, মাথাব্যথা, অযাচিতভাবে ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধামান্দ্য, মুখ বা গলায় ফোলাভাব
উপরের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে বা ধূমপান ছাড়তে না পারলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। লক্ষণগুলো দেখার পরেও চিকিৎসা না নিলে সমস্যা আরও জটিলের দিকে যাবে। তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই ভালো।
ফুসফুস ক্যানসারের কারণ: ফুসফুসের কোষের ডিএনএ পরিবর্তিত হলে এই রোগ হয়। ডিএনএ আমাদের কোষকে বলে দেয় কখন জন্মাবে, কীভাবে বাড়বে এবং কখন মারা যাবে। ক্যানসার কোষে এই নির্দেশ বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে ওঠে। ফলে টিউমার তৈরি হয় এবং তা শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পরে।
ধূমপানের ধোঁয়ায় থাকা কারসিনোজেন (ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থ) ফুসফুসের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বারবার ধূমপান কোষের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে ক্যানসারে রূপ নেয়।
ফুসফুস ক্যানসারের ধরন: চিকিৎসকরা ফুসফুস ক্যানসারের কয়েকটি ধরন জানিয়েছেন এগুলো হলো:
১. স্মল সেল লাং ক্যানসার: সাধারণত দীর্ঘদিনের হেভি স্মোকারদের মধ্যে হয়।
২. নন-স্মল সেল লাং ক্যানসার: এটি বেশ কয়েকটি উপধরনে বিভক্ত, যেমন স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা, অ্যাডেনোকার্সিনোমা এবং লার্জ সেল কার্সিনোমা।
ঝুঁকির কারণ:
ধূমপান, প্যাসিভ স্মোক বা অন্যের ধোঁয়া গ্রহণ, আগের বুকে রেডিয়েশন থেরাপি
রাডন গ্যাস, অ্যাসবেস্টস, আর্সেনিক, নিকেল, ক্রোমিয়ামের মতো পদার্থে এক্সপোজার, পারিবারিক ইতিহাস
জটিলতা: ফুসফুসের ক্যানসার অনেক সময় জটিল আকার ধারণ করে। বিশেষ করে অনেক বেশি দেরি করে চিকিৎসকের কাছে গেলে এই রোগের জতিলতা বেড়ে যায়। তখন যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে:
শ্বাসকষ্ট: টিউমার এয়ারওয়ে বন্ধ করে দিলে বা ফুসফুসের পাশে পানি জমলে।
কাশির সঙ্গে রক্ত: এয়ারওয়েতে রক্তক্ষরণ হলে।
ব্যথা: ক্যানসার শরীরের অন্যত্র ছড়ালে।
বক্ষ অঞ্চলে তরল জমা (প্লুরাল ইফিউশন): এতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
মেটাস্টেসিস: ক্যানসার মস্তিষ্ক বা হাড়ে ছড়াতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
প্রতিরোধের উপায়:
ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন, ধূমপান করা বন্ধ করুন , সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোক এড়িয়ে চলুন, বাড়িতে রাডন গ্যাস পরীক্ষা করুন, কারখানার ক্ষতিকর পদার্থের এক্সপোজার কমান, ফলমূল ও সবজি-ভিত্তিক স্বাস্থ্যকর খাদ্য খান, নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ফুসফুস ক্যানসার এমন একটি নীরব ঘাতক, যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা না পড়লে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ধূমপান এই রোগের প্রধান কারণ হলেও একমাত্র কারণ নয় দূষণ, বংশগততা, পরিবেশগত ঝুঁকি ও জীবনযাত্রার অভ্যাসও বড় ভূমিকা রাখে। তবে আশার কথা হলো, সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা, ধূমপান থেকে বিরত থাকা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করার মাধ্যমে ফুসফুস ক্যানসার প্রতিরোধ সম্ভব। আগে থেকে সাবধান হওয়া ও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই হতে পারে সুস্থ থাকার সহজ পথ।