দেশের ইতিহাসে বিতর্কিত নির্বাচনের অন্যতম কুশীলব মনে করা হয় কে এম নুরুল হুদাকে। তার অধীনে ২০১৮ সালের নির্বাচনকে বলা হয়, রাতের ভোট। প্রাণহানি, কেন্দ্র দখল, জালভোটসহ নানা অনিয়মের সবই অস্বীকার করতেন তিনি। তার গ্রেপ্তার ইস্যুতে বিশ্লেষকরা বলছেন, সাবেক সিইসির এ পরিণতি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
রাজনীতির বদলে যাওয়া এই আবহাওয়ায় হঠাৎ এক রাতে গ্রেপ্তার হলেন, রাতের ভোটের তকমা পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা। নতুন করে আলোচনায় সিইসি হিসেবে তার বিতর্কিত ভূমিকা।
২০১৭ থেকে ২২ সাল পর্যন্ত তার আমলে ৬ হাজার নির্বাচনে ব্যাপক প্রাণহানি, জালভোট ও অনিয়মের অভিযোগ ভুড়িভুড়ি।
নানা শঙ্কার পরও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপিসহ সব দল। অথচ, নির্বাচন ব্যবস্থার শেষ পেরেক ঠোকা হয় সেবার। যেখানে ১০৩টি আসনের ২১৩টি কেন্দ্রে ভোট পড়ে শতভাগ। ওইসব ভোটকেন্দ্রে ভোটপড়ে মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদেরও।
ওই নির্বাচনের ৫০টি আসনের নির্বাচনি প্রক্রিয়ার ওপর এক পরিবীক্ষণের ফলাফলে ৪৭টিতেই অনিয়মর প্রমাণ পায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, টিআইবি। এর মধ্যে ৩৩টি আসনে আগের রাতে ব্যালটে সিল মারা হয়েছে বলে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিএনপির মতো একটি বড় দল ১৭৭টি কেন্দ্রে শূন্য ভোট পেয়েছে। এমনটি আওয়ামী লীগ তারা চরম পরাক্রমশালী তারাও ২টি কেন্দ্রে শূন্য ভোট পেয়েছে। তার মানে এই ভোটের তথ্যগুলো সঠিক ছিল না, এগুলো বানোয়াট ছিল। গেজেট প্রকাশ করে তদন্ত করে তারা ব্যবস্থা নিতে পারত। সেটা তারা করেনি। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে তারা যদি দোষীসাব্যস্ত হয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একইভাবে নুরুল হুদা কমিশনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনও ছিল বিতর্কিত। ২০১৯ এর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন ১১১ জন। আর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন পদে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হন ২ হাজার জনপ্রতিনিধি। ওই নির্বাচনে সহিংসতায় নিহত হন শতাধিক।
নির্বাচন বিশ্লেষক জেসমিন টুলি বলেন, ২ লাখ ভোটকেন্দ্র ক্লোজলি মনিটরিং করা সম্ভব না। সেজন্য একটা নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে হলে সম্মিলিত স্টেকহোল্ডার ছিল (রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, ভোটার, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন) সবার সেসময়ে দায়িত্বে কি অবহেলা ছিল, তাদের ব্যর্থতার কারণ কি ছিল সেগুলো চিহ্নিত করা একান্তভাবে প্রয়োজন।
সিইসি পদ থেকে অবসরে যাওয়ার ছয়মাস পর এক সাক্ষাতকারে নূরুল হুদা স্বীকার করেন, রাতে ভোটের অভিযোগের সত্যতা থাকতে পারে। সবশেষ রোববার গ্রেপ্তারের পর, আদালতে জেরার মুখে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে।