ঘুম ভাঙে বিষাদের গন্ধে। আকাশে হঠাৎ আগুনের রেখা দেখা যায়, অথচ কেউ বাজি পোড়ায়নি। টেলিপ্রিন্টারে ছুটে আসা শব্দগুলোর ভেতর যেন আগুন আছে—"অঘোষিত হামলা", "নিরপেক্ষ ভূখণ্ডে বিস্ফোরণ", "শত্রু নয়, কিন্তু মিত্রও নয়" এমন এক সময়ের জন্ম হয়েছে যেখানে কৌশলের মুখোশ পরে দাঁড়িয়ে আছে যুদ্ধ।
একটা বুলেট কখনো কখনো শুধু এক শরীর নয়, এক ইতিহাস বিদ্ধ করে। সাম্প্রতিক কয়েকটি হামলা, ড্রোনের আকাশচারণ, সাইবার নীরবতা ভেঙে দেওয়া কোড, আর সীমান্তে ‘মৃত্যুহীন অনুপ্রবেশ’ সব কিছু মিলে এক অজানা প্রস্তুতির গন্ধ ছড়ায়।
বিশ্বের বুকে এখন আর কেউ নিরপেক্ষ নয়। যে চুপ থাকে, সে আসলে অপেক্ষা করে; যে কথা বলে না, সে শুধুই লেখে অন্যরকম ভাষায়—কোড, চুক্তি, নিষেধাজ্ঞা। আর এভাবেই শুরু হয় যুদ্ধ; বিনা ঘোষণায়, বিনা পতাকায়।
হয়তো আমাদের চোখ ধাঁধাচ্ছে বড় রাষ্ট্রগুলোর বাণিজ্য চুক্তি, শান্তির প্রতিশ্রুতি। অথচ পেছনের ঘর অন্ধকার সেখানে কৌশলগত প্রেম আর প্রতারণার দোলাচল। যুদ্ধ এখন আর শুধু রাইফেলের আওয়াজ নয়, বরং তথ্যের নিঃশব্দ বিস্ফোরণ।
দর্শনের এক গূঢ় সত্য বলে—যদি কেউ দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধের আশঙ্কা করে, সে নিজেই একসময় যুদ্ধ হয়ে ওঠে। তবে কি আমরাই এখন যুদ্ধ? আমাদের উদ্বেগ, আমাদের প্ররোচনা, আমাদের উল্লাস?
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘণ্টাধ্বনি কি তখনই বাজে, যখন একটি শিশু যুদ্ধের শব্দে জন্মায় না, কিন্তু যুদ্ধের নেপথ্য রাজনীতি তাকে শিখিয়ে দেয়—কাকে ভয় করতে হয়!
স্মরণ করো—প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরু হয়েছিল এক যুবরাজের গুলিতে, দ্বিতীয়টি এক আগ্রাসী মানচিত্র আঁকার লোভে।
এবারের শুরুটা—তবে কি একটি ‘ডিজিটাল গুলি?
একটি ‘নিরীহ প্রতিরক্ষা চুক্তি’?
নাকি আমাদেরই চোখের অদৃশ্যতা?
মানুষ আগেও ভাবতো, যুদ্ধ শুরু হলেই বিশ্ব তা জানবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে—যখন বিশ্ব বুঝবে, ততক্ষণে যুদ্ধ অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
আর তখন হয়তো শিরোনাম হবে না, শুধু থাকবে পুড়ে যাওয়া একটি মানচিত্র...
আর সেখানে লেখা থাকবে—“শেষ যুদ্ধ নয়, শুরুটা এখানেই হয়েছিল।”
সিফাত,
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়