তেহরান যেন নিঃশব্দে একটি কফিনের ঢাকনা বন্ধ করল, কিন্তু ভেতরে কেউ মারা যায়নি। বরং একজন জীবন্ত নেতা তাঁর সমস্ত ক্ষমতা তুলে দিলেন তাঁদের হাতে, যাদের কবজিতে কোরআনের আয়াতের চেয়েও দৃঢ় অস্ত্রের ঘুষি। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইরানের অবিসংবাদিত সর্বোচ্চ নেতা, তাঁর সিংহাসন না ছাড়লেও, সেই সিংহাসনের ক্ষমতা এখন থেকে ‘সুপ্রিম হাউস’-এর হাতে। নামটি যতটা রহস্যময়, বাস্তবতা তার চেয়েও বেশি বিস্ফোরক।
এখন থেকে ইরানের সিদ্ধান্ত হবে ক্ষুধার্ত আগুনের মতো কোনো ফতোয়ার অনুমোদনের অপেক্ষা নেই, কোনো ধর্মীয় ব্যাখ্যার শিষ্টাচার নেই। বিপ্লবী গার্ড চাইলে একরাতে পারমাণবিক সুইচ চেপে দিতে পারে, চাইলে বিশাল সামরিক আগ্রাসনের ঘোষণা দিতে পারে সেই স্বাধীনতা তারা পেয়েছে। এমনটা ইরানে আগে কখনও ঘটেনি।
এই পরিবর্তন শুধু ক্ষমতা বিন্যাস নয়। এটি একটি গভীর রাজনৈতিক অঙ্ক, যার প্রতিটি রেখা আঁকা হয়েছে হুশিয়ারির কালি দিয়ে। খামেনি জানেন, তাঁর সময় ফুরিয়ে আসছে জীবন এখন শুধু বয়সের হিসাব নয়, শত্রুর নিশানাও বটে। আর তাই, যেকোনো হঠাৎ মৃত্যু বা হত্যাচেষ্টার পরেও যেন ইরানের শাসনব্যবস্থা ভেঙে না পড়ে, সেই ব্যবস্থাই এখন প্রস্তুত।
ইরান ক্রমশ পরিণত হচ্ছে এক ‘সামরিক ধর্মতন্ত্রে’ একদিক থেকে কাবার দিকে মুখ করা, অন্যদিক থেকে রাইফেলের দিকে। খামেনি নিজে সরে গেলেন পর্দার আড়ালে, আর সামনে এলো এক কঠোর মুখ যাদের চোখে কূটনীতি নয়, যুদ্ধই এখন একমাত্র ভাষা।
তারা জানে, সময় অল্প। পশ্চিমা বিশ্ব তাদের শ্বাস নিচ্ছে ঘাড়ে। ইসরায়েল যেন প্রতি রাতে গুমোট স্বপ্ন হয়ে উঠে আসে তেহরানের আকাশে। এই চাপের ভেতরে দাঁড়িয়ে ইরান বুঝিয়ে দিল ‘আমাদের নেতা গেলেও বিপ্লব যাবে না। বরং তখন বিপ্লব আরও খাঁটি হবে, আরও ক্ষিপ্র’।
এখানে আর কোনো আবায়া নেই, কোনো রক্ত-মাখানো ফতোয়ার অনুগ্রহ নেই। আছে খাকি ইউনিফর্ম, ট্যাংক, ড্রোন, আর মুখে ধোঁয়া ওঠা প্রতিশোধ। মধ্যপ্রাচ্য এখন আর একা সৌদি-আমেরিকা-মিত্রপক্ষের খেলার মাঠ নয়। ইরান তাতে নিজের দাবার ঘুঁটি রেখে বলছে ‘ম্যাচ এখন শুরু’।
এমন সিদ্ধান্ত কেবল যুদ্ধের প্রস্তুতি নয়, বরং যুদ্ধকে একটি নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোয় পরিণত করার দুঃসাহসিক প্রয়াস। এখন থেকে প্রতিটি সামরিক পদক্ষেপ শুধু প্রতিক্রিয়া হবে না, তা হবে নীতিগত, সুপরিকল্পিত এবং সময়োপযোগী।
ইরান তার সমস্ত খেলাটি খোলামেলাভাবে সাজিয়েছে। এখন থেকে যেকোনো আঘাত আসবে ছদ্মবেশ ছাড়া, প্রতিক্রিয়া আসবে তাৎক্ষণিক। আর সবকিছুর কেন্দ্রে থাকবে এক শক্তি যারা ধর্মের কথা খুব কম বলে, কিন্তু প্রয়োজনে রক্তের ভাষা বোঝে।
মধ্যপ্রাচ্য এখন নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করল। আর এই অধ্যায়ের শিরোনাম হতে পারে—
“স্রষ্টার ছায়ায়, সৈনিকের শাসন”।
সিফাত
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।