চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় চাঞ্চল্যকর চিকিৎসা অনিয়মের ঘটনা সামনে এসেছে। পপুলার মেডিকেল সেন্টারে ভুল অপারেশনের পর রোগীর পেটের ভেতর থেকে আস্ত একটি গজ কাপড় উদ্ধার করেছেন চিকিৎসকরা।
এ ঘটনায় স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কতজন রোগীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে অযোগ্য চিকিৎসকের কারণে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর খালপাড়া গ্রামের মোঃ মোশারফ আলী স্ত্রী মোছাঃ সায়রা খাতুন (৪৫) এবছরের ২৫ মে আলমডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের পপুলার মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হন।
তীব্র পেটব্যথার কারণে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ডাক্তার হোসাইন ইমাম তড়িঘড়ি করে সার্জারি করেন। অপারেশনের জন্য পরিবারের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়। অপারেশনের পাঁচ দিন পর তাকে বাড়ি পাঠানো হলেও বাড়ি ফিরে সঙ্গে সঙ্গে তার পেটের ব্যথা বেড়ে যায় এবং পেট শক্ত হয়ে টিউমারের মতো কিছু অনুভূত হতে থাকে। দীর্ঘ তিন মাস চিকিৎসার চেষ্টা করেও কোনো সমাধান পাননি।
১৩ সেপ্টেম্বর আলমডাঙ্গার ডক্টর’স কেয়ার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হলে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদি জিয়া উদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বে পুনরায় অপারেশন করা হয়। অপারেশনের সময় রোগীর পেটের ভেতর থেকে একটি আস্ত গজ কাপড় বের করা হয়।
রোগী সায়রা খাতুন বলেন, “গত তিন মাস ধরে প্রচণ্ড কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। পেটের ব্যথা ও শক্ত গাঁটের মতো জায়গা ফুলে থাকায় মনে হচ্ছিল ভেতরে কিছু আছে। রাজশাহীতেও চিকিৎসা না পেয়ে অবশেষে আলমডাঙ্গায় এসে দ্বিতীয়বার অপারেশন করাতে পারি। ডাক্তাররা জানান পেটের ভেতর গজ কাপড় ছিল।”
রোগী সায়রা খাতুনের ছোট ছেলে মোঃ জাইদুল ইসলাম বলেন, “মাকে প্রথমে আলমডাঙ্গা পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ডাক্তার হোসাইন ইমাম ১৫ হাজার টাকায় টিউমারের অপারেশন করেছেন। তবে অপারেশন ভুল ছিল, আমরা তখন জানতাম না। মায়ের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চাই।”
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. হাদি জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, “রোগীর পেট থেকে গজ কাপড় বের করা হয়েছে। এতে পুঁজ ও নষ্ট রক্ত জমে ছিল। সময়মতো অপারেশন না হলে রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। এ ধরনের অপারেশন গ্রহণযোগ্য নয়। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পপুলার মেডিকেল সেন্টারের রিসেপশনিস্ট মোছাঃ জুলেখা খাতুন বলেন, “২৫ মে অপারেশন করা হয়েছিল। আমরা তখনও জানতাম না এটি ভুল ছিল। পাঁচ দিন পর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। পরে রোগী আরও কয়েকবার চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন।”
এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য ডাক্তার হোসাইন ইমামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডাক্তার হোসাইন ইমামের বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক ভুল চিকিৎসার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি আলমডাঙ্গার ফাতেমা টাওয়ার ক্লিনিকে তার ভুল চিকিৎসার কারণে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনার পর জনসাধারণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, অযোগ্য ও দায়িত্বহীন চিকিৎসকের কারণে আরও কতজন রোগী ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন।