বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। খালেদা জিয়ার জন্মের পর প্রথম দুইবছর কাটে জলপাইগুড়িতে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান একটি স্বাধীন দেশ হলে তার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার দিনাজপুরে চলে আসেন। সেখান স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
খালেদা জিয়ার শৈশব ও শিক্ষা জীবন কাটে দিনাজপুরে। পাঁচ বছর বয়সে খালেদা খানম পুতুলকে তার বাবা দিনাজপুরের সেন্ট জোসেফ কনভেন্টে ভর্তি করান। সেখানে খালেদা জিয়া প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি দিনাজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (গার্লস স্কুল) থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।
এরপর দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালে এ কলেজ থেকে খালেদা জিয়া ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
বেগম খালেদা জিয়ার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ফেনী জেলার বর্তমান পরশুরাম উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন।
ব্যবসার উন্নতি লাভের আশায় ইস্কান্দার মজুমদার দিনাজপুরে এসেছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টির পর তিনি দিনাজপুরের মুদিপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
গ্রেড এইটের ছাত্র ইস্কান্দার মজুমদার ১৯১৯ সালে তার বোন ও ভগ্নিপতির সঙ্গে জলপাইগুড়িতে থাকতে গিয়েছিলেন। বর্তমানে জলপাইগুড়ি ভারতের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন এবং একটি চা বাগানে চাকরি নেন।
পরে তিনি চাকরি ছেড়ে চায়ের ব্যবসা শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি জলপাইগুড়ির ‘চা বাগান সমিতি’র সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেখানে ১৯৩৭ সালের ১৯ মার্চ তার সঙ্গে তৈয়বার বিয়ে হয়। তৈয়বা বর্তমান পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ীর বাসিন্দা।
এই পরিবার ‘টি-ফ্যামিলি’ নামে পরিচিত। এই দম্পতির তিন মেয়ে ও দুই ছেলে, যাদের মধ্যে খালেদা জিয়া তৃতীয়। তার মা তৈয়বা মজুমদার ছিলেন সমাজকর্মী। তিনি তাঁর দিনাজপুরের বাড়িতে দুস্থ মহিলাদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করতেন। খালেদা জিয়ার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই।
দিনাজপুরের মুদিপাড়ায় পিত্রালয়ে ১৯৬০ সালের ৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর তরুণ ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদা খানম পুতুলের বিয়ে হয়। জিয়া ও খালেদা প্রথম চার বছরের দাম্পত্য জীবন দিনাজপুরে কাটিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া বিয়ের পর জিয়াউর রহমানের গ্রামের বাড়ি বগুড়ার বাগবাড়িতেও থেকেছেন। বিয়ের পর তিনি স্বামীর কর্মক্ষেত্রের কারণে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যখন হত্যা করা হয়, বেগম খালেদা জিয়া তখন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। রাজনীতি নিয়ে চিন্তাভাবনা তো দূরের কথা, রাজনৈতিক কোন অনুষ্ঠানেও তাকে খুব একটা দেখা যেতো না।
এরশাদ বিএনপির অভ্যন্তরে ভাঙন ধরানোর জন্য একের পর এক প্রচেষ্টা চালান। তখন অনেকটা আকস্মিকভাবেই রাজনীতিতে এলেন বেগম খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে আসার তার কোন পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। বিএনপিতে ভাঙন ধরানোর সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয় বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসায়। বিএনপির নেতাদের পরামর্শ ও অনুরোধে বেগম খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালে বিএনপিতে সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগ দেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ১৯৮৩ সালে ভাইস-চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালের আগস্টে চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন।
১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানের মুখে এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বেগম খালেদা জিয়া। সে নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নির্বাচিত নারী সরকার প্রধান হন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়, বরং মুসলিম বিশ্বেও একজন পথিকৃৎ নারী সরকারপ্রধান হিসেবে বিরল মর্যাদা অর্জন করেন।