দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত লালন সাধু এবং ফকিরদের আগমনে মুখর হয়ে উঠেছিল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। গানে-গানে লালন সাঁইয়ের ভাব-দর্শন ও আধ্যাত্মবাদের মহিমায় মানবিক সমাজ গঠনের আকুতি জানালেন তারা।
জাতীয় পর্যায়ে লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সারা দেশে তিনদিনব্যাপী লালন মেলা এবং উৎসবের আয়োজন করেছে।
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই জমে ওঠে আয়োজন। লালনের গানে মুখর হয়ে ওঠে উদ্যানের বড় অংশ। শত শত লালনভক্ত ও অনুরাগীর পদচারণে মুখর ছিল চারপাশ। মঞ্চের শিল্পীদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়েছেন দর্শকেরা। সেই গানে মিশে ছিল ভক্তির আবেশ, ভালোবাসার উচ্ছ্বাস আর একাত্মতার সুর। লালনের ভাব ও দর্শনের সুরে শুরু হলেও আয়োজনে বাজে লোকসংগীত, আধুনিক ও বাউল ঘরানার নানান গান।
উদ্বোধনী পরিবেশনায় ছিলেন এ্যানি বৈরাগী ও সুখলাল রায়। তাঁরা পরিবেশন করেন ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’, ‘আল্লাহ বলো মনরে পাখি’ ও ‘যদি তরিতে বাসনা থাকে’। এরপর মঞ্চে ওঠেন সূচনা শেলী। গেয়ে শোনান, ‘কী সন্ধানে যাই সেখানে মনের মানুষ যেখানে’ ও ‘আলিফ দিয়ে টোকা মারো’। ফাহমিদা আহমেদ পরিবেশন করেন ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ ও ‘আমার ঘরখানায় কে’।
এরপর মঞ্চে আসে দল বাউলা ব্যান্ড। তাদের পরিবেশনায় ছিল ‘প্রাণ গৌর এসে’, ‘দিল না দিল না’, ‘রবে না এ ধন’সহ একাধিক জনপ্রিয় লালনগীতি। একে একে মঞ্চে ওঠেন টংয়ের গান, পথিক নবী অ্যান্ড টিম ক্রিয়েটিভ, অরূপ রাহী, সমগীত, নীরব অ্যান্ড বাউলস, দীনা মণ্ডল, মুজিব পরদেশী, কানিজ খন্দকার, সাগর বাউল ও বেঙ্গল সিম্ফনি। তাঁরা পরিবেশন করেন ‘তিন পাগলে হলো মেলা’, ‘মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার’, ‘মন তুই করলি রে কী ইতরপনা’, ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’, ‘কানার হাটবাজার’ প্রভৃতি গান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক শেখ রেজাউদ্দিন আহমেদ ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ইবনে ওয়াহাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাঁরা কেউ মঞ্চে বক্তৃতা দিয়ে গান শুনতে আসা দর্শকের বিরক্তির কারণ হননি। দর্শকসারিতেই বসে গান উপভোগ করেন।