এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে এবং সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
রাজধানীর জাতীয় শহিদ মিনারে আন্দোলনরত চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক শিক্ষক বলেন, শিক্ষকরা অনেক নিপীড়ন, নির্যাতন, অবহেলার শিকার। সরকারের অন্যান্য সেক্টরে ৪০-৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িভাড়া ভাতা দেয়া হয়, কিন্তু আমরা মাত্র ২০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছি, সেটাও আমাদের দেয়া হচ্ছে না। পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে গেছে, তখনই মাত্র শিক্ষকরা দলে দলে এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।
আন্দোলনরত আরেক শিক্ষক বলেন, ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধি শিক্ষক সমাজ মানে না। সরকারের এই প্রজ্ঞাপণ আমরা তীব্রভাবে প্রত্যাখান করছি।
২০ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারির আগ পর্যন্ত শিক্ষকদের আন্দোলন চলবে। একইসঙ্গে চিকিংসা ভাতা ১৫০০ টাকা ও ৭৫ শতাংশ উৎসবভাতা দিতে হবে শিক্ষকদের।
এর আগে রোববার (১৯ অক্টোবর) সকালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের উপসচিব মরিয়ম মিতুর সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারের বিদ্যমান বাজেট সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় আগামী ১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা প্রদান করা হবে। তবে সর্বনিম্ন বাড়িভাড়া ভাতা হবে ২ হাজার টাকা।
এ আদেশে বলা হয়েছে, বাড়িভাড়া ভাতা পরবর্তী জাতীয় বেতনস্কেলের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট এমপিও নীতিমালা ও সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নিয়োগের শর্তাবলী মেনে চলা বাধ্যতামূলক। ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনও বকেয়া থাকবে না এবং সকল আর্থিক বিধি-নিষেধ অবশ্যই পালন করতে হবে।
এছাড়া, ভবিষ্যতে যদি ভাতা সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে, তবে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ দায়বদ্ধ থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে শিক্ষকদের এ বাড়িভাড়া প্রদানে কিছু শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো-
১. উক্ত বাড়িভাড়া ভাতা পরবর্তীতে জাতীয় বেতনস্কেল অনুযায়ী সমন্বয় করতে হবে।
২. ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও নীতিমালা-২০২১’, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)’ এবং ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (ভোকেশনাল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, কৃষি ডিপ্লোমা ও মৎস্য ডিপ্লোমা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন, আদেশ, পরিপত্র, নীতিমালা অনুসরণপূর্বক নিয়োগের শর্ত পালন করতে হবে।
৩. ভাতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা কোনো বকেয়া প্রাপ্য হবেন না।
৪. ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সকল আর্থিক বিধি-বিধান অবশ্যই পালন করতে হবে।
৫. এ ভাতা সংক্রান্ত ব্যয়ে ভবিষ্যতে কোনও অনিয়ম দেখা দিলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ অনিয়মের জন্য দায়ী থাকবেন।
উল্লেখ্য, বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন এমপিওভক্ত শিক্ষকরা। গত আগস্ট মাসে তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ করে মূল বেতনের ওপর শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা দেয়ার দাবি তোলেন।
কিন্তু তাদের দাবি উপেক্ষা করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাড়িভাড়া মাত্র ৫০০ টাকা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবসে সে প্রজ্ঞাপন সামনে এলে তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ওই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষকরা।