আত্মহত্যা: নীরব কান্নার নাম —একটি জীবনবোধের নিবন্ধ

সে চুপচাপ থাকত। মুখে হাসি থাকলেও চোখে এক ধরনের অদ্ভুত ক্লান্তি। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিত ছোট করে, যেন শব্দের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। মাঝে মাঝে সামাজিক মাধ্যমে কিছু লেখার চেষ্টা করত—অস্পষ্ট, কুয়াশার মতো, কিন্তু ভাবনার গভীরে ডুবে থাকা।

আমরা কেউ বুঝতে চাইলাম না।

বুঝলাম যখন খবর এল—সে নেই। নিজেই নিজের জীবনকে থামিয়ে দিয়েছে।

"যত হাসি দেখাও মুখে,  

মন ততই নীরব থাকে..."

আত্মহত্যা, শব্দটা শুনলেই বুকের ভেতর হালকা একটা কাঁপুনি লাগে। আমরা ভাবি, এটা দুর্বল মানুষের কাজ। ভাবি, যার জীবন সুন্দর, সে কেনই বা মরবে? অথচ সত্যি কথা হলো, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবে—তারা মরতে চায় না। তারা শুধু বেঁচে থাকার এই অসহ্য যন্ত্রণার থেকে মুক্তি চায়।

একেকজন মানুষ একেকভাবে ভাঙে। কেউ ভাঙে ভালোবাসার অভাবে, কেউ ভাঙে জীবনের ব্যর্থতায়, কেউ ভাঙে পরিবারে বোঝা হয়ে বাঁচতে বাঁচতে। তারা দিনের পর দিন একা থাকে, কাঁদে, রাত জেগে ভাবনা পালটে আবার সেই ভাঙা মন নিয়ে অফিসে যায়, ক্লাসে যায়, সমাজে মিশে যায়।

"ভেতরে জমে ওঠে এক নিরব আগুন,  

কেউ দেখে না, কেউ বোঝে না সেই জ্বালুনি।"

কিন্তু এই মানুষগুলো যদি একটু আশ্রয় পায়, একটু বোঝার একজন মানুষ পায়—তাহলেই হয়তো তারা আবার ভাবতে পারত নতুন করে বাঁচার কথা।

সমস্যা হলো, আমরা কেউ সেই মানুষটাই হই না। আমরা পরামর্শ দিই, সমালোচনা করি, তুলনা করি—কিন্তু জড়িয়ে ধরি না।

আমরা বলি—“আত্মহত্যা পাপ।” হ্যাঁ, পাপ তো বটেই। কিন্তু তার চেয়েও বড় পাপ—কারো অসহায় কান্না না শোনা, কাউকে তার শেষ ভরসার জায়গা না দেওয়া।

"জীবনটা বড় যত্নের ফুল,  

ভেঙে গেলে আর জোড়া লাগে না।"

সমাজের দায়িত্ব হলো এমন মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, যারা কষ্টে আছে কিন্তু বলতে পারছে না। যারা হাসছে, অথচ ভেতরে ভেঙে যাচ্ছে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী—প্রত্যেকের উচিত একটু মনোযোগী হওয়া, একটু সময় দেওয়া, একটু কোমল শব্দ বলা।

আর রাষ্ট্রের? রাষ্ট্রের উচিত মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া। স্কুল, কলেজ, অফিসে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা। আত্মহত্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনার জায়গা তৈরি করা।

আত্মহত্যা কোনো প্রতিবাদ নয়, কোনো মুক্তির পথও নয়। এটি চিরতরে সব সম্ভাবনার শেষ।

আর জীবন?

জীবন মানে সম্ভাবনা। প্রতিটি নতুন ভোর মানেই নতুন শুরু।

"যত অন্ধকারই হোক রাত,  

আলো ঠিক ফিরে আসে।"

তাই যদি কেউ এই লেখাটা পড়ে এখনই ভাবছেন—“থেমে যাই,”

তাহলে একটু দাঁড়ান। একটু সময় দিন নিজেকে। কাউকে বলুন, কান্না করুন, সাহায্য চান।

আপনি একা নন।

এই পৃথিবীতে আপনার জন্যও অপেক্ষা করছে নতুন সকাল।

 

সিফাত-উল্লাহ


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শাপলার বিকল্প বেছে না নিলে ইসির পছন্দের প্রতীক পাবে এনসিপি

৩ দফা দাবিতে ‘মার্চ টু সচিবালয়’: শহিদ মিনারে হাজার হাজার শিক্ষক

পয়েন্টের প্রত্যাশা নিয়ে সন্ধ্যায় মাঠে নামছে বাংলাদেশ

সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ রুপার, যে দামে বিক্রি হচ্ছে

শিক্ষকদের ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি আজ

‘আমরা কারাগারে নয়, ছিলাম কসাইখানায়’

জামিনের পর এক ক্লিকেই আদেশ চলে যাবে কারাগারে: আইন উপদেষ্টা

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন

জীবননগরে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষাঙ্গনে মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেল বন্ধে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়

ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা

১০

বাপ্পারাজের রহস্যময় পোস্ট !

১১

ফিক্সিংয়ে জড়িতরাও কী বিপিএলে অংশগ্রহণ করতে পারবেন :যা জানা গেল

১২