ময়মনসিংহের গৌরীপুরে কৃষক আব্দুল মোতালিব ঢেঁড়শ গাছ থেকে পাটের মতো শক্ত ও সুন্দর আঁশ উৎপাদন করে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি গৌরীপুর পৌর শহরের মৃত আব্দুল মান্নান (মুন্নাছ) এর পুত্র। এ বিষয়টি জানার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন। ঢেঁড়শের আঁশের দৃঢ়তা ও উচ্চমানের কারণে কৃষকরা এখন এটিকে ব্যবহার ও বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে বাড়তি লাভবান হতে পারছেন। এটি দেশের প্রথমবারের মতো ঢেঁড়শের আঁশ উৎপাদন ও ব্যবহারের শুরু।
আব্দুল মোতালিব জানান, তিনি একজন বর্গাচাষী। মাত্র এক শতাংশ জমিতে ১২০–১৩০টি ঢেঁড়শ গাছের বিজ বপন করেন। সেখানে প্রায় ৩৫ কেজি ঢেঁড়শ পাওয়া গেছে। ভারী বর্ষণের কারণে জলাবদ্ধতার কারণে কিছু গাছ মারা গেলে, তিনি প্রতিবেশী মফিজ উদ্দিনের পরামর্শে লম্বা ও পরিপুষ্ট ঢেঁড়শ গাছগুলোকে ৭ দিন পানিতে ডুবিয়ে রেখে ছাল ছাড়িয়ে রোদে শুকান, যা পাটের মতো আঁশ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য।
তিনি আরও জানান, এখন তো দেখি ঢেঁড়শের আঁশ পাটের আঁশের চেয়েও সুন্দর হয়েছে। ৮-৯ফুট লম্বা হওয়ায় প্রত্যেকটি গাছে অনেক আঁশও পাওয়া গেছে। প্রায় সাড়ে ৩ কেটি পাট পেয়েছি। রশি বা পাটজাতীয় পণ্য তৈরিতেও ব্যবহার করা যায়। অনেক শক্তিশালী। এ আঁশের তৈরি রশি নিয়ে আমরা অনেকেই টানাটানি করেছি, ছেঁড়া যায়নি। ফলে পাটের আঁশের ন্যায় ঢেঁড়শের আঁশও বাজারজাত করা সম্ভব।
এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষকরা বলেন, ঢেঁড়শ গাছের দীর্ঘতা এবং শক্তিশালী আঁশ দেখে তারা মুগ্ধ। ঢেঁড়শ খড়িও পাওয়া যাবে, যা জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা যাবে। এতে ঢেঁড়শ সবজির পাশাপাশি নতুনভাবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. উবায়েদ উল্লাহ নূরী যুগান্তরকে বলেন, আমি বিস্মৃত! প্রথমবার দেখলাম, জানলাম যে ঢেঁড়শ গাছ থেকে পাটের মতো আঁশ উৎপাদন করা হয়েছে। কৃষক আব্দুল মোতালিব স্বপ্রণোদিতভাবে এটি সফল করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি জানান, ঢেঁড়শের আঁশ দিয়ে তৈরি দরিও দেখলাম অনেক শক্ত। এটি পাটের মতো ব্যবহারযোগ্য। হাইব্রিজ প্রজাতির ঢেঁড়শ গাছ ৮–১০ ফুট লম্বা হয় এবং ডালাপালা কম থাকে। এই প্রজাতির ঢেঁড়শ গাছ থেকে আঁশ উৎপাদন করে কৃষক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা নতুনভাবে কাজ শুরু করবো। সফল হলে কৃষক ঢেঁড়শ গাছ থেকে সবজির পাশাপাশি আঁশ ও ঢেঁড়শখড়িও পাবে, যা বহুমাত্রিকভাবে ব্যবহারযোগ্য এবং উপকারী হবে।