বেক্সিমকো গ্রুপের কম্পানিগুলো পরিচালনায় রিসিভার নিয়োগে হাইকোর্টের আদেশ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ক্ষেত্রে স্থগিত করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিটির আবেদনে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও মোস্তাফিজুর রহমান খান। বাংলাদেশ ব্যংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান।
রিটকারী আইনজীবী মাসুদ আর রহমানও শুনানিতে অংশ নেন। মোস্তাফিজুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিসিভার নিয়োগে হাইকোর্টের আদেশটি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ক্ষেত্রে স্থগিত করা হয়েছে। যে কারণে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডে কোনো রিসিভার বসছে না। এছাড়া এ সংক্রান্ত রুল দুই সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টকে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন।
এর জন্য বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন আদালত।’
বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো) গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে শিল্পপতি এ রাজনীতিক পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদা নিয়ে এ দায়িত্ব পালন করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সালমা ইসলামকে হারিয়ে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসনে পুননির্বাচিত হন সালমান এফ রহমান।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে ছিলেন সালমান এফ রহমান। গত ১৩ আগস্ট নৌ-পথে পালানোর সময় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ। পরদিন তাঁকে নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। ওইদিন ওই মামলায় সালমান এফ রহমানকে ১০ দিনের রিমান্ডে দেন আদালত। পরে কয়েক দফা রিমান্ড বাড়ানো হয়।
এই অবস্থায় বেক্সিমকো গ্রুপের সব কোম্পানি পরিচালনায় রিসিভার নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান। প্রাথমিক শুনানির পর গত ৫ সেপ্টেম্বর রুলসহ আদেশ দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ। অন্তর্বর্তী আদেশে হাইকোর্ট বেক্সিমকো গ্রুপের সব কোম্পানি পরিচালনায় বাংলাদেশ ব্যাংককে রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বেক্সিমকো গ্রুপের সব কোম্পানির সম্পত্তি ছয় মাসের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে সংযুক্ত (অ্যাটাচ) রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সালমান এফ রহমানের নেওয়া ঋণের টাকা উদ্ধার এবং বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনার পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডসহ বেক্সিমকো গ্রুপের সব কোম্পানি পরিচালনায় রিসিভার নিয়োগ করতে এবং কোম্পানির সব সম্পত্তি সংযুক্ত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই সঙ্গে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যান্য কোম্পানিকে বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ এবং পরিশোধ না করা ঋণের তথ্য সরবরাহ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভণর, অর্থ সচিব, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এই আদেশের পর সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রুহুল আমিনকে রিসিভার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে তার আগেই রিসিভার নিয়োগে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত ও দ্রুত রুল শুনানির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। সেই আবেদনে শুনানির পর আদেশ দিলেন সর্বোচ্চ আদালত।