দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের আলামত দেখছে বিএনপি। চলমান এই সংকট নিরসনে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ শুক্রবার রাজধানীর নাপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সামনে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. আব্দুল কুদ্দুসের রোগ মুক্তি কামনায় দুঃস্থদের মাঝে জায়নামাজ বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে বৃহত্তর আদর্শের জন্য লড়াই করছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘আমরা বৃহত্তর আদর্শের জন্য লড়াই করছি।আমরা মানবিক সাম্য ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছি।আমরা আইনের শাসনের জন্য লড়াই করছি, যার জন্য দরকার চিরায়ত গণতন্ত্র, প্রকৃত গণতন্ত্র, খাঁটি গণতন্ত্র।এটা বৃহত্তর আদর্শের লড়াই যেখানে জনগণের মালিকানা জনগণ ফিরে পাবে।সেই মালিকানা আটকে রাখা তো বড় ধরনের ফ্যাসিবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের সরকার ক্ষমতায় থাকলে প্রতিটি পদে পদে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় সেই জবাবদিহিতা এখন নেই।অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও আমরা মনে করি জনসমর্থিত। কারণ সমস্ত রাজনৈতিক দল শুধু আওয়ামী লীগ আর তাদের কয়েকটি দোসর ছাড়া সবাই এই সরকারকে সমর্থন করেছে।ড. ইউনূস সাহেবকে আমরা সবাই সমর্থন করে যাচ্ছি।কিন্তু এটাও তো ঠিক দুর্ভিক্ষের আলামত যদি আমরা দেখতে পাই, শুনতে পাই তাহলে তো জনগণ আমাদেরকে ছেড়ে দেবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে প্রায় অসংখ্য গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মানুষ কর্মহীন হচ্ছে।মানুষ যদি খাবার কিনতে না পারে, তাহলে কিন্তু দুর্ভিক্ষের আলামত তৈরি হবে এবং এই আলামত তৈরি হলে কেউ-ই কিন্তু রেহাই পাবে না। আর হাততালি দেবে ওই পতিত ফ্যাসিস্টরা।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যে দোসরা ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা মেরে বিদেশে পাচার করেছে তাদের সঙ্গে নামে মাত্র কিছু প্রতিষ্ঠান একই কাজ করেছে।সরকার ইচ্ছা করলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ করে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো চালাতে পারে।গার্মেন্টসগুলো যাতে বন্ধ না হয় সরকার এটাকে নানাভাবে টেকওভার করতে পারে।’
দোসররা থেকে থাকলে তাদের বিচার করুন- উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘শ্রমিকদের কলকারখানা যেন বন্ধ না হয়। কারণ অর্থনীতির কঠিন করুণ অবস্থা।এটা শুধু মুখের কথা নয়, সামনে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশে দুর্ভিক্ষ হয় কিনা এইটা এখন মানুষের মনে মনে।আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে এটা ঠিক। কিন্তু পাশাপাশি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি না করলে জনগণের কাছে কেউ-ই রেহাই পাবেন না। জনগণ কিন্তু এটা ছেড়ে দেবে না।’
‘যে কোনো বিষয়ে গো ধরে থাকলে এতে আমাদের গণতন্ত্রের জন্য সর্বনাশ, প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা মুখ থুবড়ে পড়বে এবং আমরা একটা দীর্ঘস্থায়ী অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে জিম্মি হয়ে পড়ব’, যোগ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে তো সংস্কার বিরোধী কোনো কথা বলা হয়নি, সংস্কারের পক্ষেই বলা হয়েছে।আপনারা যে সংস্কারের কথা বলছেন বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে প্রায় অনেক জিনিসই প্রতিফলিত হয়েছে।জুলাই সনদের অনেক বিষয় বিএনপি গ্রহণ করেছে।কিন্তু এটি মূলনীতির মধ্য নিতে হবে কেন?যুগে যুগে দেশে দেশে আরও সংস্কার হবে।সংস্কার কোন থাই পর্বতমালার মতো স্থির কোনো বিষয় নয়, সংস্কার একটি গতিশীল ব্যাপার।সমাজ এবং রাষ্ট্রে যখন যেটির প্রয়োজন হবে গণতন্ত্রের স্বার্থে, রাষ্ট্রের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, তখনই সংস্কার করে সেই আইন প্রণয়ন হবে।এটাই তো গণতান্ত্রিক সংবিধানের নিয়ম, কিন্তু এটাকে মূলনীতির মধ্যে নিতে হবে আগে সংস্কার এগুলো বলে তো বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে।এতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্ত তৈরি হচ্ছে।’
কেন আপনারা জনগণকে এভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন- এমন প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, ‘এটা না করে আমরা যেটি বলেছি জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফেরত দেন, এটাই সবচাইতে বড় কাজ।এটাই তো ১৬ বছর শেখ হাসিনা বন্ধ করে রেখেছিলেন।দরজায় খিল দিয়ে রেখেছিলেন সেই বন্ধ দরজা আমাদের এখন খুলতে হবে। সেটি খোলার জন্য জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে তার ক্ষমতা অর্থাৎ তার মনোনীত সরকার গঠন করতে হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ,স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, জিয়া পরিষদেরসিনিয়র সহ সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মহাসচিব ড.এমতাজ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আব্দল্লাহহিল মাছুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, সদস্যসচিব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জিয়া পরিষদ ডেসকো শাখা, যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুল প্রমুখ।