অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের দুই ছাত্র প্রতিনিধি- তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ- আজ বুধবার পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) আজ বুধবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। এর আগেই দুই উপদেষ্টা পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে জানানো হয়েছে। সরকারের ভেতরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও বিষয়টি অবহিত করেছেন তাঁরা।
সরকার–সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়সহ উপদেষ্টা পরিষদের অনেকেই মনে করছেন, তফসিল ঘোষণার পর ছাত্র প্রতিনিধি দু’জনের আর সরকারে থাকা সমীচীন হবে না। তাঁরা নির্বাচন করুন বা না করুন, নৈতিকতার জায়গা থেকে তাদের পদ ছাড়াই উচিত। সরকারের এই মনোভাব বুঝে তফসিল ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তেই দু’জন পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের বক্তব্য জানতে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে তিনজনকে এ সরকারে নেওয়া হয়। এর মধ্যে নাহিদ ইসলাম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। আসিফ মাহমুদ প্রথমে শ্রম, পরে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হন। মাহফুজ আলম ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (উপদেষ্টা পদমর্যাদা)।
পরে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠিত হলে নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে দলের আহ্বায়ক হন। এরপর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মাহফুজ আলম। যদিও এনসিপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পদ না থাকলেও মাহফুজ ও আসিফ—দু’জনেরই দলের ওপর প্রভাব আছে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এরই মধ্যে জানিয়েছেন, তিনি ঢাকায় ভোট করবেন। ৯ নভেম্বর তিনি ভোটার এলাকা পরিবর্তনের আবেদন করে ধানমন্ডির ভোটার হন। এরপর থেকেই আলোচনা, তিনি ঢাকা–১০ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। এমনকি বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা বা তাদের মনোনয়নে প্রার্থী হওয়ার কথাও চাউর হয়। তবে ৪ ডিসেম্বর বিএনপি দ্বিতীয় দফায় যে ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে ঢাকা–১০ রয়েছে। ফলে আসিফ স্বতন্ত্র নাকি কোনো দল থেকে নির্বাচন করবেন—এখনো তা স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে মাহফুজ আলমের সম্ভাব্য নির্বাচনি এলাকা লক্ষ্মীপুর–১। সেখানে বিএনপি দীর্ঘদিন প্রার্থী ঘোষণা না করলেও গত সোমবার এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বিএনপিতে যোগ দেন এবং তাঁকে ওই আসনে মনোনয়ন দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। এর ফলে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে মাহফুজের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে।
এদিকে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো জোট গঠনে তৎপর। গত রোববার এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নতুন একটি জোট গঠনের ঘোষণা দেয়। এনসিপিও বিভিন্ন আসনে দলীয় প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করছে। মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ এনসিপির মনোনয়ন চাইবেন কি না—তা নিয়েও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের আগ্রহ রয়েছে।
সব মিলিয়ে, দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টার সম্ভাব্য পদত্যাগ ও তাঁদের রাজনৈতিক গন্তব্য—দু’টিই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।