ইসরায়েল গাজা নগরীতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালাচ্ছে—যা চলমান যুদ্ধের দুই বছরে সবচেয়ে তীব্র বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণের ভিড়াক্রান্ত এলাকায় পালাতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিচায় আদরাই গাজা নগরীর বাসিন্দাদের সতর্ক করে বলেন, সেনারা “নজিরবিহীন শক্তি” ব্যবহার করবে। তিনি স্থানীয়দের আহ্বান জানান উপকূলবর্তী আল-রাশিদ সড়ক ধরে দক্ষিণে চলে যেতে—যা বর্তমানে একমাত্র অনুমোদিত পথ।
সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানান, গাজা নগরীতে পশ্চিম দিকে উপকূলের দিকে যেতে থাকা মানুষরা হামলার তীব্রতায় বিশ্রাম নেওয়ারও সুযোগ পাচ্ছেন না। “এই অভিযান পুরো ব্লক ধ্বংস করে দিচ্ছে। অনেক পরিবার এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে, বিশেষ করে তাল আল-হাওয়া এলাকায়,” বলেন তিনি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক ফিলিস্তিনি দক্ষিণে যেতে চাইছেন, কিন্তু ভাড়া গাড়ি বা আসবাবপত্র নেওয়ার সামর্থ্য নেই। ফলে অনেকে পায়ে হেঁটে বা ছোট গাড়ি টেনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছেন।
৫০ বছর বয়সী নিভিন আহমেদ বৃহস্পতিবার সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে গাজা নগরী থেকে ১৫ কিলোমিটার হাঁটতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, “আমরা ক্লান্ত হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়েছি। ছোট ছেলেটি ক্লান্তিতে কেঁদেছে। আমরা পালাক্রমে একটি ছোট গাড়ি টেনে নিয়েছি।”
আল-জাজিরার তথ্যমতে, দক্ষিণের আল-মাওয়াসি এলাকায় অনেকে আশ্রয় নিলেও সেখানে আগেও হামলা হয়েছে, যদিও এটিকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আগস্টের শেষ দিক থেকে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ গাজা নগরী ছেড়েছে। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, এখনো প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার মানুষ উত্তর গাজায় আটকে আছেন।
শুক্রবার ভোর থেকে সারা গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু গাজা নগরীতেই নিহত ২৬ জন। তাল আল-হাওয়ায় একটি আবাসিক ভবনে বোমা হামলায় তিনজন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারান।
এ ছাড়া দক্ষিণ গাজায় সাহায্য নিতে যাওয়া দু’জন নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল জানিয়েছে, শুক্রবার সেখানে অপুষ্টিজনিত কারণে ৯ বছর বয়সী এক শিশু মারা গেছে। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৪৪১ জন।
এদিকে গাজায় টানা ১০ দিন ধরে কোনো জ্বালানি প্রবেশ করতে না পারায় হাসপাতালগুলো মারাত্মক সংকটে পড়েছে। ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ শাওয়া জানান, জ্বালানির মজুত সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টা টিকবে। তার ভাষায়, “সব স্তরে এখন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”