ইসির তালিকা থেকে প্রতীক নিচ্ছে না এনসিপি, ‘শাপলার’ দাবিতে অনড়

ছবি: সংগৃহীত ।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংরক্ষিত তালিকা থেকে কোনো প্রতীক বেছে নিচ্ছে না জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বরং ইসির প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা’ যুক্ত করতে নির্বাচন পরিচালনা বিধি সংশোধনের দাবি জানিয়েছে দলটি।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) এ সংক্রান্ত চিঠি নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবকে ইমেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

ইতোমধ্যে কোনো দলকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দেয়ার বিষয়ে ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিবন্ধন পেলেও ‘শাপলা’ প্রতীক ইসির নির্বাচন পরিচালনা বিধিতে না থাকায় এনসিপিকে বরাদ্দ দেয়া যাচ্ছে না বলে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এনিসিপির চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের গত ৩০ সেপ্টম্বর স্মারক নং ১৭.০০.০০০০.০২৫.৫০.০১০.০৮ (অংশ-২)-৬৯১ মূলে প্রেরিত চিঠির প্রেক্ষিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপি’র দলীয় অবস্থান লিখিতভাবে আপনাকে অবহিত করা হলো। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৯(১) এ নতুন করে নির্বাচনী প্রতীক তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে একটি কমিটি গঠন করে এবং সংশ্লিষ্ট কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে। উক্ত কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে এনসিপি’র একটি প্রতিনিধি দল গত ৪ জুন নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করেন এবং বৈঠকে কমিশনের উক্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক রয়েছে বলে এনসিপিকে আশ্বস্ত করেন। এছাড়াও এসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়। 

গত ২২ জুন ২০২৫ তারিখে জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন দাখিল করে এবং দলের অনুকূলে ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের জন্য আবেদন জানায়। পরবর্তীতে জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপি বিগত ৩ আগস্ট কমিশনের কাছে চিঠি প্রেরণের মাধ্যমে পার্টির অনুকূলে প্রতীক সংরক্ষণের ক্রম হিসাবে ১. শাপলা ২. সাদা শাপলা এবং ৩. লাল শাপলা পছন্দ করে। এছাড়াও উক্ত চিঠিতে শাপলাকে প্রতীক হিসেবে দৃশ্যমান করার ক্ষেত্রে শাপলার ভিন্ন ভিন্ন ভার্সন বা আংশিক ডিসটর্টেট ভার্সন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এনসিপি সবসময় আলোচনায় প্রস্তুত রয়েছে বলে জানানো হয়। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এনসিপি’র পরবর্তী বৈঠকসমূহে প্রতীক হিসাবে শাপলাকে দৃশ্যমান করার ক্ষেত্রে জাতীয় প্রতীকে দৃশ্যমান শাপলার পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ভার্সনে আঁকা শাপলার নমুনা ছবি নির্বাচন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হয়। 

উল্লেখ্য, অত্র পত্রে উপস্থাপিত নমুনার বাইরেও শাপলার আংশিক ভিন্নতর কোনো নমুনার ব্যাপারে আলোচনা করতেও এনসিপি প্রস্তুত রয়েছে। পরবর্তীতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এনসিপি নির্বাচন কমিশনের কাছে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধনক্রমে শাপলা প্রতীক তালিকাভুক্ত করে  দলের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে দরখাস্ত প্রেরণ করে। 

এনসিপি প্রেরিত উক্ত ৩ আগস্ট ও ২৪ সেপ্টেম্বরের দরখাস্তের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন অদ্যাবধি কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নাই, অর্থাৎ উক্ত দরখাস্ত দু’টি অনিষ্পন্ন অবস্থায় রেখে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে এনসিপি বরাবর ৩০ সেপ্টেম্বর সূত্রোক্ত চিঠি প্রেরণ করা বিধিসম্মত হয়নি বলে এনসিপি মনে করে। 

এনসিপি মনে করে গণমানুষের সাথে শাপলা প্রতীক কেন্দ্রীক তার গভীর সংযোগ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। শাপলা এনসিপি’র শুভাকাঙ্খী, সমর্থক, কর্মী, নেতৃবৃন্দকে দেশের জনগণের সঙ্গে চমৎকার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। দেশের মানুষের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার শক্তি এনসিপি’র নাই ফলশ্রুতিতে শাপলা ব্যতীত নির্বাচন কমিশনের প্রেরিত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের চিঠির প্রেক্ষিতে বেধে দেওয়া তালিকা থেকে অন্য কোন প্রতীক পছন্দ করা এনসিপির জন্য সম্ভবপর নয়।   

ইতোপূর্বে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীসহ সারাদেশের ১০১ জন বিজ্ঞ আইনজীবী শাপলাকে প্রতীক হিসাবে বরাদ্দ দিতে কোনো আইনি বাধা নেই বলে বিবৃতি প্রদান করেছেন। সম্প্রতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান যুক্তরাষ্ট ভিত্তিক ঠিকানা টেলিভিশনে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন যে, ‌'শাপলা প্রতীক এনসিপিকে না দেয়াটা এটা খুব বেশি আইনর জটিলতা বলে আমি মনে করি না। এটা দেয়া যেতেই পারে। দেয়নি বলে ভবিষ্যতেও দেয়া যাবে না, এমনটি আমি মনে করি না।‘ এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের অনেক প্রথিশযথা আইনজীবী নির্বাচন কমিশন এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দিতে পারে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। অধিকন্তু নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে এনসিপি'র অনুকূলে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে তার দলের ইতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। 

এনসিপির নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনের চেয়ে নির্বাচন কমিশন উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেক বিলম্ব করছে বলে জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে। নির্বাচন কমিশন এনসিপি-কে তার প্রার্থীত শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দিয়ে বিষয়টি নিয়ে অনাকাঙ্খিত, আইনবহির্ভুত, বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে। এর মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন এনসিপির নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত করছে। নির্বাচন কমিশনের এরূপ বৈরী আচরণ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের সদিচ্ছা ও সক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। 

সার্বিক বিবেচনায় এনসিপি আশা করে, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার বিধি ৯(১) সংশোধনক্রমে জাতীয় নাগরিক পার্টি’র অনুকূলে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা, এবং ৩. লাল শাপলা থেকে যেকোন একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে। 


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের ‘পদধ্বনি’ আসর

ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনায় জামায়াত আমিরের শোক

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আরো ৪৩৬ জন

রাজধানীর পুরোনো ভবনগুলোর ৯০ ভাগই বিল্ডিং কোড মানে নাই : রিজওয়ানা হাসান

তীব্র বিপর্যয়ে যুক্তরাজ্য, বন্ধ শত শত স্কুল

সুপার ওভারে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

বাংলাদেশী এক নাগরিককে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ

জুলাই অভ্যুত্থান ও চলমান রাষ্ট্র সংস্কারে সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা

মানুষের পাশে মানুষ থাকি—মানবিকতা জেগে উঠুক: কচি খন্দকার

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য: আসিফ আকবর

১০

শীতে গিজার চালিয়েও বিদ্যুৎ খরচ কমাবেন যেভাবে

১১

রেললাইনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল যুবকের

১২