অন্তর্বর্তী সরকারের নবনিযুক্ত উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘শেখ (মুজিবুর রহমান) তার একাত্তর পূর্ববর্তী ভূমিকার জন্য সম্মান পাবেন, যদি শেখ মুজিব একাত্তর পরবর্তী গণহত্যা, গুম, দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ এবং অবশ্যই ‘৭২-এর সংবিধান, যা বাকশালের পথ প্রশস্ত করেছিলো— এসবের জন্য তার দল ও তার পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চান। ’
বুধবার (১৩ নভেম্বর) ভোরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয়ে এ কথা লেখেন তিনি।
মাহফুজ তার পোস্টে বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বঙ্গব্ন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার লেখার শিরোনাম ‘পতিত শেখরা’।
“শেখ মুজিব ও তার কন্যা (আরেক শেখ) তাদের ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্য জনগণের তীব্র রাগ-ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। তাদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য, শেখ মুজিব একসময় পূর্ব বাংলার গণমানুষের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন, যে জনপ্রিয়তা হাসিনার ছিল না।
“জনগণ পাকিস্তানি নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার (শেখ মুজিব) নেতৃত্ব অনুসরণ করেছিলেন, কিন্তু একাত্তরের পর তিনি নিজেই একজন অত্যাচারী হয়ে ওঠেন। মুজিববাদের প্রতি তার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭১ সারের পর বাংলাদেশ পঙ্গু ও বিভক্ত হয়ে পড়ে। তার ফ্যাসিবাদী ভূমিকার কারণে ১৯৭৫-এ তার মৃত্যুতে মানুষ শোক-অনুতাপ প্রকাশ করেনি।“
অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, “কিন্তু শেখ তার একাত্তরপূর্ব ভূমিকার জন্য সম্মান পাবেন, যদি শেখের একাত্তর পরবর্তী গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ ও নিশ্চিতভাবেই বাহাত্তরের সংবিধান, যা বাকশাল প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছিল—এসবের জন্য তার দল ও পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চান।
“শেখ-কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কথাও তাদের স্বীকার করা, ক্ষমা চাওয়া এবং এ জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত (শেখ মুজিবকে একজন ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও উপহাসের পাত্র বানিয়েছিলেন তিনি)। তাদের আরও উচিত, মুজিববাদী রাজনীতি ও শেখ পরিবারের বন্দনা পরিহার করা “
বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরানোর প্রসঙ্গ ধরে মাহফুজ বলেন, “কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে শেখের ছবি সরানো হয়েছে (যদিও তা কর্মকর্তারা সরিয়েছেন); যে শাসন মেয়ে করেছেন ফ্যাসিবাদী বাবার নামে ও তার একাত্তর-পরবর্তী চেতনার কথা বলে। তার বাবাকে দেবতুল্য করা হয়েছিল, কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের মানুষ একসঙ্গে তাদের দুজনের ছবি, ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নামিয়ে ফেলেছেন।”
সরকারি অফিস থেকে শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনার ছবি সরানোর কারণে কেউ যদি আক্ষেপ প্রকাশ করেন, তাহলে তিনি ‘গণঅভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন’ বলেও মন্তব্য করেছেন তরুণ উপদেষ্টা।
তিনি লিখেছেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। আমরা এখানে এসেছি, ঐতিহাসিক অসংগতি ও অপব্যাখ্যাগুলো দূর করতে। মনে রাখতে হবে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের গণমানুষের। আবার, কোনো মুক্তিযোদ্ধাও যদি একাত্তরের পর কোনো অন্যায় করে থাকেন, তার বিচার ও সাজা হওয়া উচিত। স্বাধীনতাযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন বলেই তাদের (একাত্তরের পর কোনো অন্যায় করা মুক্তিযোদ্ধাদের) এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া উচিত নয়।
“বাংলাদেশের উচিত, শাসক পরিবারগুলোকে দেবতুল্য করা ও সেই ক্ষমতাসীন পরিবারগুলোর সবকিছু নিজেদের বলে মনে করা— এ থেকে বেরিয়ে আসা। ’৪৭ ও ’৭১-এর পাশাপাশি জুলাইয়ের চেতনা আমাদের সবার স্মৃতিতে থাকুক অম্লান!”