ঋতু পরিক্রমায় এখন শীতকাল। এ সময় শরীরের স্বাভাবিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা খানিকটা দুর্বল হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। শুষ্ক আবহাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের জন্য এই মৌসুমে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়াও শীতের সময় জয়েন্টের বা গাঁট ব্যথার মতো নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত জটিলতা বৃদ্ধি পায়। এ কারণে এই সময় সুস্থ থাকতে খাদ্যাভ্যাসে সচেতন ও বৈজ্ঞানিক পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ বলে চ্যানেল 24 অনলাইনকে জানালেন ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ইসরাত জাহান। এই পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী শীতে সুস্থ থাকতে খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর উপাদান এবং শীতকালীন সবজির স্যুপ ভূমিকা পালন করে।
শীতের খাদ্যাভ্যাসে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়:
পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাদ্য গ্রহণ: শীতে পিপাসার অনুভূতি কম থাকলেও শরীরের পানির চাহিদা অপরিবর্তিত থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনি জটিলতা এবং ত্বকের শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করা। গরম পানি, লেবু-চা ও হালকা সবজি স্যুপ খেতে পারেন; এসব উপকারী তরল খাদ্য হিসেবে বিবেচিত।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী খাবার নির্বাচন: শীতকালীন সংক্রমণ প্রতিরোধে ইমিউনিটি শক্তিশালী রাখা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য এই সময় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন- কমলা, আমলকী, লেবু ইত্যাদি খেতে পারেন। ভিটামিন এ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ শীতের সবজি রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায়। এছাড়া আদা, রসুন ও হলুদ পরিমিত পরিমাণে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
অতিরিক্ত তেল ও ভারী খাবারে সংযম: শীতে ভাজাপোড়া ও চর্বিযুক্ত খাবারের প্রতি আকর্ষণ স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা বেড়ে যায়, যা ওজন বৃদ্ধি, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা এবং হৃদরোগজনিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এ কারণে শীত মৌসুমে রান্নায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার না করাই ভালো। সেদ্ধ ও হালকা রান্না করা খাবার বেছে নেয়া উত্তম।
শীতকালীন সবজির পুষ্টিকর স্যুপের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা:
শীতের সবজি দিয়ে তৈরি করা স্যুপ শীতকালের জন্য একটি আদর্শ স্বাস্থ্যকর খাবার। এটি সহজপাচ্য, শরীরকে উষ্ণ রাখতে সহায়ক এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এ জন্য শীতে সবজির স্যুপ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
শীতকালীন উপকারী সবজি:
▪ গাজর: ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
▪ ফুলকপি ও বাঁধাকপি: ফাইবার ও ভিটামিন সি-এর দুর্দান্ত উৎস এই সবজি।
▪ পালং শাক: আয়রন ও ফলেট সরবরাহ করে।
▪ মুলা, কুমড়া ও লাউ: হজমে সহায়ক এবং ক্যালোরির পরিমাণ তুলনামূলক কম।
বাসা-বাড়িতে তৈরি শীতের সবজি স্যুপের পুষ্টিগত নির্দেশনা:
শীতকালীন সবজি দিয়ে স্যুপ তৈরির ক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি যে, সবজি অতিরিক্ত সেদ্ধ করা যাবে না। হালকা সেদ্ধ করা উচিত, যাতে পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। লবণের পরিমাণ সীমিত রেখে স্বাদ বৃদ্ধির জন্য কিছুটা গোলমরিচ বা আদা ব্যবহার করতে পারেন। কৃত্রিম ফ্লেভার, অতিরিক্ত কর্নফ্লাওয়ার বা প্রসেসড উপাদান এড়িয়ে চলুন। এছাড়া ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য অবস্থা অনুযায়ী উপকরণ নির্বাচন করতে হবে।
পরামর্শ:
শীতকালীন খাদ্যাভ্যাস বয়স, শারীরিক অবস্থা, বিদ্যমান রোগ এবং জীবনযাত্রার ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হওয়া উচিত। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ব্যক্তিগত ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় যেকোনো শারীরিক জটিলতা বা সমস্যা হলে সময় নষ্ট না করে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।