বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে: হাইকোর্ট

ছবি : সংগৃহীত।

এখন থেকে সারা দেশের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে বলে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। 

এছাড়াও নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা নিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনী ও চতুর্থ সংশোধনীর বিধান বাতিল করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।  

জানা যায়, অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধি নিয়ে টানাপোড়েন এবং বিচার বিভাগে দ্বৈত শাসন চলছে বলায় আওয়ামী লীগ সরকারের রোষাণলে পড়েন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। এ কারণে শুধু তাকে পদ হারতেই হয়নি দেশ ছাড়া করা হয়।

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি বিষয়টি রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত ছিলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো এ ক্ষমতা প্রয়োগ করত সরকারের নির্বাহী বিভাগ। 

রায়ের পর আইনজীবীরা বলেন, এ কারণে সরকারের পছন্দমত আদেশ না দিলে বদলি, বরখাস্তসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হতো বিচারকদের।

এক রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে সারা দেশের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে বলে রায় দিলেন উচ্চ আদালত। বাতিল করা হয়েছে বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা নিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনী ও চতুর্থ সংশোধনীর বিধানও। শুধু তাই নয় তিন মাসের মধ্যে বিচার বিভাগীয় পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট জানান আইনজীবীরা।

আইনজীবীরা বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরলো সুপ্রিম কোর্টে।

এর আগে সকালে বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের রায় ঘোষণা শুরু হয়।

১৩ আগস্ট বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। একইসঙ্গে এ বিষয়ে রায়ের জন্য এদিন ধার্য করা হয়েছিল।

ওইদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম।

২৩ এপ্রিল বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়।

গত ২০ এপ্রিল বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

এর আগে মামলাটি বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। তবে গত ২৪ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় সেই বেঞ্চটি ভেঙে যায়।

এরপর সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য নতুন বেঞ্চ নির্ধারণের আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

তিনি গত বছরের ২৫ আগস্ট ১০ জন আইনজীবীর পক্ষে মূল সংবিধানের ১৯৭২ সালের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন। পরে হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চান– বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না।

বর্তমানে প্রযোজ্য (সংশোধিত) সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে। কিন্তু ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, ‘বিচারকর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্বে নিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকবে।

বিদ্যমান সংবিধানের অনুযায়ী বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি ও শৃঙ্খলাবিধির ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব রয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৬৩

মানবতাবিরোধী মামলায় অভিযুক্তরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না

নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে এক পরিবারের ৫ জন দগ্ধ

নাইজেরিয়ায় নৌকা ডুবি নিহত অন্তত ৬০

তারেক-বাবর সহ সব আসামির খালাসের রায় বহাল

গুপ্তরাজনীতি’র অবসান চায় ছাত্রদল

ক্রিকেটে ইতালির উত্থান

জোটবদ্ধ নির্বাচন করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে: ইসি সানাউল্লাহ

নির্বাচনের আগে ২ হাজার এএসআই নিয়োগ : আইজিপি

জিমেইল ব্যবহারকারীদের সতর্কবার্তা দিলো গুগল

১০

চুয়াডাঙ্গায় ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযান

১১

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ: ডাকসু নির্বাচনে বাধা নেই

১২