খালেদা জিয়ার ১০ বছরের সাজা স্থগিত

বেগম খালেদা জিয়া

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টের দেয়া ১০ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার করা পৃথক দু’টি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। একইসাথে হাইকোর্টের দেয়া ১০ বছরের সাজার স্থগিত করেছেন আদালত।

সোমবার বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। এর আগে রোববার এ বিষয়ে শুনানি শেষে সোমবার আদেশের দিন ধার্য করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তাদের সাথে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজাল, আমিনুল ইসলাম, জাকির হোসেন ভূইয়া, মো. মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ।  রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান।

শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এখানে পাঁচ বছরের সাজা থেকে হাইকোর্টে ১০ বছর করা হয়েছে। কিভাবে করেছে দেখাতে চাই।’

এরপর খালদা জিয়ার অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল হাইকোর্টের রায়ের অংশ আদালতে পড়ে শোনান। পরে দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান মামলার চার্জশিট পড়ে বলেন, ‘এখানে অর্থ আত্মসাৎ হয়নি। সুদে-আসলে সকল অর্থ ব্যাংকে জমা আছে। আত্মসাতের কিছু হয়নি। এফআইআরে অর্থ আত্মসাতের কিছু দেখা যায়নি। ফান্ড মুভ হয়েছে। টাকা অ্যাকাউন্টে জমা আছে। আত্মসাতের কিছু নেই।’

অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের রাজবন্দীর জবানবন্দির খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের মধ্যদিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে।’

শুনানি শেষে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এই মামলা সাক্ষী দিয়ে প্রমাণ করতে পারেনি যে একটি টাকাও আত্মসাৎ করেছে। আমরা আইনগতভাবে এই মামলার মোকাবেলা করব। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে এই রায় দেয়া হয়। আদালত আমাদের শুনেছেন। কোন কোন গ্রাউন্ডে লিভ চাচ্ছি সেটা দেখে আগামীকাল আদেশ দেবেন।’

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘উপমহাদেশের ইতিহাসে এমন নজির নেই, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে চার মাসের মধ্যে আমাদের আপিল নিষ্পত্তি করতে বলেছিল। পলিটিক্যাল স্কিমের অংশ হিসেবে গায়ের জোরে একতরফা শুনানি করে বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১০ বছরের সাজা দেয়া হয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে অন্যায় করা হয়েছে। নিম্ন আদালতে অন্যায়ভাবে পাঁচ বছর সাজা দেয়া হয়, এক তরফা শুনানি করে হাইকোর্টে ১০ বছর সাজা দেয়া হয়। আমরা আশা করছি, খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন এবং এ মামলার সাজার রায় থেকে খালাস পাবেন।’

এর আগে গত ৩ নভেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানির জন্য ১০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন চেম্বার আদালত।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ -এর বিচারক ড. মো: আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।

একইসাথে খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

পরে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া আপিল করেন। একই বছরের ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট।

সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।

এছাড়া পাঁচ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া এবং ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের আপিল খারিজ করেন আদালত।

হাইকোর্টের ওই রায়ের আগের দিন ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো: আখতারুজ্জামান একটি রায় দেন। রায়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসাথে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।

পরে একই বছরের ১৮ নভেম্বর ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। গত ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। তার অংশ হিসেবে নিজের খরচে পেপারবুক (মামলা বৃত্তান্ত) তৈরির আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট সে আবেদন মঞ্জুর করেছেন। এখন পেপারবুক তৈরি হলে আপিল শুনানি হবে।

অপর দিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন সকল রাজনৈতিক দলের পরামর্শে ৬ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা দণ্ড রাষ্ট্রপতি মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়।


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজ থেকে কলেজ ও প্রাথমিকে ঈদের ছুটি শুরু

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম হঠাৎ উত্থান-পতন

শাকিব-নিশো বিতর্ক নিয়ে মুখ খুললেন রায়হান রাফী

সীমান্তের শুন্যরেখায় শেষবারের মতো মৃত মায়ের মুখ দেখল বাংলাদেশের দু্ই মেয়ে।

৩০ দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শুরু

মহার্ঘ্য ভাতা নয়, বিশেষ প্রণোদনাই পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা

ট্রাইব্যুনালে গুমের অভিযোগ জমা দিলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন

দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে মাইক্রোবাসের ধাক্কা, নিহত তিন

বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থ উপদেষ্টা

সিকৃবির ৬ হলের নাম পরিবর্তন

১০

টুং টাং শব্দে মুখরিত কামারপট্টি

১১

প্রকৃতির খুব কাছে থাকতে চাই : বুবলী

১২