পিত্তথলি হজমে সহায়তা করে। অনেক সময় দেখা যায় পিত্তথলিতে পাথর হয়। গলস্টোন বা পিত্তথলির পাথর হলো পিত্তথলিতে জমে থাকা কঠিন পদার্থ যা জমে পাথরে পরিণত হয়। সাধারণত নারীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি হয়। তবে অনেক পুরুষেরও পিত্তথলির পাথর হয়। মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে পুরুষদের মধ্যেও এটি হতে পারে।
উপসর্গ: সাধারণত পিত্তথলির পাথরের কোনো উপসর্গ তৈরি করে না। তবে পিত্তথলির পাথর যখন তার সঙ্গে সংযোগকারী পিত্তথলির পথ বন্ধ করে দেয় অথবা পিত্তথলির প্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। যেগুলো হলো:
১) পিত্তথলির ব্যথা সাধারণত হঠাৎ এবং তীব্র হয়ে থাকে এবং বিশেষত খাবার খাওয়ার পর তীব্র হতে পারে। এটি পিত্তথলির সংকোচন ঘটিয়ে প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়।
২) পিত্তথলির পাথরের ব্যথা সাধারণত পেটের উপরের ডানদিকে, নাভির নিচে অনুভূত হয়, কিন্তু কখনও কখনও এটি বাহু, কাঁধ, বা পিঠেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ব্যথা সাধারণত তীব্র, খোঁচানো এবং টান টান অনুভূতি দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, এটি হৃৎপিণ্ডের ব্যথার মতো মনে হতে পারে, কিন্তু এটি একটি আলাদা সমস্যা।
৩) পেটের উপরের অংশে তীব্র ব্যথা।
৪) বমি বমি ভাব এবং ঘাম।
৫) জ্বর, দ্রুত হৃদস্পন্দন ।
৬) ত্বক ও চোখের হলুদ রং, মূত্রের রং গাড় এবং পায়খানার রং হালকা।
৭) পেট ফুলে যাওয়া এবং স্পর্শ করলে ব্যথা।
প্রতিরোধ: পিত্তথলির সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে কিছু উপায় রয়েছে যা গলস্টোনের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। যেমন, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়া এবং ধীরে ধীরে ওজন কমানো। তবে দ্রুত ওজন কমানোর ফলে পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে, তাই এর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
পিত্তথলির পাথরের কারণ: যখন পিত্তথলির রাস্তায় যখন বিভিন্ন উপাদানগুলির অতিরিক্ত পরিমাণে জমে যায় এবং সেগুলি কঠিন পাথরের মতো জমে। পিত্তথলিতে সাধারণত দুই ধরনের পাথর হয়ে থাকে। যার মধ্যে কোলেস্টেরল–জাতীয় পাথরের আধিক্য বেশি। পাথরের আকার ছোট ধূলিকণা থেকে টেনিস বলের মতোও হতে পারে। এক বা একাধিক পাথরও থাকতে পারে। পিত্তথলির মধ্যে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বা বিলিরুবিন জমে গিয়ে পিত্তথলির তৈরি হতে পারে। এর কারণ হতে পারে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন বা বাইল অ্যাসিডের অভাব।
চিকিৎসা: পিত্তথলির চিকিৎসার প্রধান পদ্ধতি হল গলব্লাডার অপসারণ। এটি একটি সাধারণ ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি। গলব্লাডার সরানোর পর, পিত্তথলি সরাসরি লিভার থেকে অন্ত্রে প্রবাহিত হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে, যেমন গলস্টোনের সঙ্গে সংক্রমণ বা গুরুতর শারীরিক অবস্থা থাকলে, পিত্তথলির স্থানে একটি ক্যাথেটার রেখে ড্রেন করা হয়। পিত্তথলির পাথর হওয়ার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরামর্শ নিতে হবে