ড. ইউনূস কি একপক্ষের হয়ে গেলেন? নির্বাচনী রোডম্যাপ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তার এ সিদ্ধান্তকে ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।

রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের স্বার্থ রক্ষায় এ সময় নির্ধারণ করেছেন? কারণ, বিএনপিসহ ৩০টির বেশি দল চলতি বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন চেয়েছিল, এমনকি সেনাপ্রধানের বক্তব্যেও ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন শেষ করার ইঙ্গিত ছিল। এই প্রেক্ষাপটে এপ্রিল নির্বাচন কতটা যৌক্তিক— এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি ড. ইউনূস।

গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে একটি পরিচ্ছন্ন, অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজন করা— যাতে ভবিষ্যতে দেশ আর কোনো নতুন সংকটে না পড়ে।

 

তিনি বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় সুশাসন নিশ্চিত না হলে, অতীতে ছাত্র-জনতার যেসব আত্মত্যাগ হয়েছে, তা বিফলে যাবে। তাই সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন- এই তিনটি ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আগামী রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব হবে। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার— যা জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি ‘সম্মিলিত দায়’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছাতে পারব। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার— যা জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি আমাদের সম্মিলিত দায়, সে বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে। এ সময় তিনি ইতোমধ্যে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান।

 

সবশেষ রাজনৈতিক সংলাপে বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল দাবি করে, জাতীয় নির্বাচন হতে হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই। তবে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হলে তারা তেমন আপত্তি করবে না। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রস্তাব দেয়— প্রথমে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, শেখ হাসিনার বিচার ও তার ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। এরপর ‘হাসিনা উৎখাত আন্দোলন’ সফল করে ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশের পরেই সাধারণ নির্বাচন দেওয়া যেতে পারে।

 

সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের দাবি ছিল ডিসেম্বরেই নির্বাচন, অথচ তা উপেক্ষা করে হঠাৎ করেই ৬ জুন শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৬ সালের এপ্রিলেই নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন। এতে বিস্মিত হয়েছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। ফলে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে— কাকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে তিনি ডিসেম্বর নয়, এপ্রিলে নির্বাচন করতে চাইছেন?

 

এপ্রিলে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পর বিএনপি কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বললেও, একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রভাবে সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করছে। এর ফলে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। দলটির দাবি, এই সিদ্ধান্তে জনগণের মনে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ তৈরি হতে পারে— আসন্ন নির্বাচন আদৌ অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কি না তা নিয়ে।

 

এপ্রিল মাসে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সমালোচনার মাত্রা আরও বেড়েছে সময়সূচি ও বাস্তবতার প্রশ্নে। রমজানের ঠিক পরপরই এ সময় পড়ায় রাজনৈতিক দলগুলো বলছে—সে সময় নির্বাচনী প্রচারণা চালানো সম্ভব নয়। তার ওপর এপ্রিল মাসে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা, আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা, চৈত্রের খরা আর কালবৈশাখীর ঝুঁকিও রয়েছে। এসব কারণে শুধু বিএনপি নয়, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই এপ্রিলকে একটি ‘অবাস্তব সময়’ হিসেবে দেখছে।

 

এই প্রসঙ্গে ১২ দলীয় জোট এক বিবৃতিতে বলেছে, ডিসেম্বর নির্বাচন শুধু একটি দলের দাবি নয়, দেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা। এপ্রিল নির্বাচন ঘোষণাটি যেন ‘এপ্রিল ফুল’ না হয়ে দাঁড়ায়।

 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। এমনকি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও সেই বিষয়টি বিভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এখন সময় এসেছে জনগণের দীর্ঘদিনের চাওয়াকে সম্মান জানানোর।

 

এপ্রিলের নির্বাচনী ঘোষণা নিয়ে বাম জোটও তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জোটের নেতারা বলেছেন, নির্বাচন কেন ডিসেম্বরের বদলে এপ্রিলে নেওয়া হলো—তা বোধগম্য নয়। তাদের ভাষায়, এতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার অভিলাষই প্রকাশ পেয়েছে। বাম জোটের অভিযোগ, দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত উপেক্ষা করে, বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে অধ্যাপক ইউনূস তার নিরপেক্ষতার অবস্থান হারিয়েছেন।

 

নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মত উপেক্ষিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যে যৌক্তিক দাবিগুলো ছিল, সেগুলো প্রধান উপদেষ্টা আমলে না নেওয়াটা অত্যন্ত হতাশাজনক।

 

একই সুরে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সও। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা একটি ধাপে অগ্রগতি হলেও, এতে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। দেশের মানুষ চায়, ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি নির্বাচিত সরকার গঠিত হোক।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদও নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরের কথা বলেছে। সেগুলো আমলে না নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অনুপযোগী বর্ষা, পরীক্ষা ও রোজার সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। সার্বিক বিবেচনায় জানুয়ারির মধ্যেও যদি নির্বাচন হতে পারতো, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা এটা আমলে নেননি।

এপ্রিল নির্বাচনের জন্য কতটা অনুকূল, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয় জোনায়েদ সাকিও। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম, ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে না পারলে তার কারণ 


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গত বছরগুলোর তুলনায় এবার চামড়ার দাম বেশি: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ড. ইউনূস কি একপক্ষের হয়ে গেলেন? নির্বাচনী রোডম্যাপ

লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান টিউলিপ সিদ্দিক

ঈদের ফিরতি যাত্রায় সবাইকে মাস্ক পরার অনুরোধ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের

ঈদের দ্বিতীয় দিনেও চলছে পশু কোরবানি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির

নগরবাসীকে বর্জ্য অপসারণে সহায়তার আহ্বান :ইশরাক

সম্পর্ক মানেই বড় দায়িত্ব: শুভশ্রী

জাতীয় জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করলেন প্রধান উপদেষ্টা

জাতীয় ঈদগাহ কেন্দ্রিক ডিএমপির ট্রাফিক নির্দেশনা

১০

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১ কোটি পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যে প্রস্তুত ট্যানারিগুলো

১১

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার, গরু চোরচালান, চামড়া পাচার এবং পুশইন বন্ধে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সীমান্তে

১২