বাতাস থেকেই পাওয়া যাবে খাবার পানি

ছবি : সংগৃহীত।

পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক অঞ্চল ডেথ ভ্যালিতে পরীক্ষামূলকভাবে বাতাস থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করেছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-এর গবেষকরা। 

সূর্যের তাপে চালিত এই জানালার আকারের যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ এক উপাদান ‘হাইড্রোজেল’, যা বাতাসের আর্দ্রতা শোষণ করে পানি বের করে আনতে পারে। খবর সিএনএন

যন্ত্রটি প্রতিদিন মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ কাপ পানি উৎপাদন করতে সক্ষম। তবে লক্ষ্য হলো, মরুভূমির মতো শুষ্ক এলাকাতেও পরিবারের জন্য পানীয় জল সরবরাহ করা। গবেষকরা বলছেন, হাইড্রোজেল কম খরচে এবং বিদ্যুৎ ছাড়াই কাজ করে।

জাতিসংঘের হিসেবে বিশ্বে দুই বিলিয়নের বেশি মানুষ নিরাপদ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত। জলবায়ু পরিবর্তনে খরা বেড়ে যাওয়ায় এ প্রযুক্তিকে সম্ভাবনাময় মনে করছেন অনেকে। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই পদ্ধতিতে খুব কম পরিমাণ পানি উৎপাদন হয় এবং ব্যয়ও বেশি। নলকূপ বা লবণাক্ত পানি পরিশোধনের তুলনায় এর খরচ বহুগুণ বেশি হলেও বোতলজাত পানির চেয়ে সস্তা।

এই যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ‘হাইড্রোজেল’ নামের বিশেষ শোষক পদার্থ। এতে মেশানো হয়েছে লবণ, আর পুরো অংশ ঘিরে রাখা হয়েছে কাচ দিয়ে।

হাইড্রোজেল বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প টেনে নেয়। শোষিত বাষ্প জমতে জমতে পদার্থটি ফুলে ওঠে। সূর্যের তাপে আবার বাষ্প ছেড়ে দেয় হাইড্রোজেল, যা কাচের দেয়ালে জমে পানির ফোঁটা হয়ে ঝরে পড়ে নিচে রাখা পাত্রে। এ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুতের দরকার হয় না, শুধু দরকার সূর্যের তাপ।

যন্ত্রটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। এমআইটির যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সুয়ানহে ঝাও জানিয়েছেন, মরুভূমির মতো একেবারে শুষ্ক এলাকায় এই যন্ত্র দিনে প্রায় এক কাপের তিন ভাগের দুই ভাগ পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারে। শুনতে কম লাগলেও, এমন পরিবেশে এক কাপ পানি মানেই জীবন রক্ষার সমান।

বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ নতুন কিছু নয়। শত শত বছর ধরে মানুষ সাগর উপকূল ও পাহাড়ি এলাকায় জলীয় বাষ্প ঘনীভূত করে পানি সংগ্রহ করেছে। তবে সেই পদ্ধতিতে বাতাসে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকা জরুরি। এমআইটির নতুন এই যন্ত্রের বিশেষত্ব হলো খুব শুষ্ক পরিবেশেও এটি কাজ করতে পারে।

হাইড্রোজেল অনেকটা স্পঞ্জের মতো। এটি নিজের আকারের তুলনায় ১০ গুণ পর্যন্ত ফুলে উঠতে পারে। সস্তা হওয়ায় শিশুদের ডায়াপারেও এটি ব্যবহার করা হয়। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এতে খুব কম শক্তি খরচ হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পল ওয়েস্টারহফ বলছেন, হাইড্রোজেলের এই বৈশিষ্ট্য মরুভূমির মতো এলাকায় পানির অভাব মেটাতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, চিলির আতাকামা মরুভূমিতেও গবেষকেরা হাইড্রোজেল ব্যবহার করেছেন। লবণের সঙ্গে মিশ্রণ তৈরি করে তারা প্রতি বর্গমিটার জায়গা থেকে প্রায় ০.৩৮ লিটার বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।

প্রযুক্তিটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও গবেষকরা আশাবাদী। মরুভূমির মতো প্রাণহীন এলাকায় যদি বাতাস থেকেই সুপেয় পানি পাওয়া যায়, তবে তা মানবজাতির জন্য হবে এক নতুন আশীর্বাদ।


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে সাড়ে ৩ হাজার নিবন্ধন

তিন দিনের সফরে শনিবার ঢাকায় আসছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

সশস্ত্র বাহিনী জাতির আস্থার প্রতীক: তারেক রহমান

এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন রিকশাচালক সুজন

১৯ দিনে প্রবাসী আয় ২৪ হাজার কোটি টাকা

ফের মা হচ্ছেন সোনম, অভিনেত্রীর স্বামী বললেন ‘ঝামেলা’

ডেঙ্গুতে এক দিনে ৪ জনের মৃত্যু

আগামী ৩-৪ কার্যদিবসের মধ্যে গণভোট আইন: আসিফ নজরুল

সিরাজগঞ্জে ‘যমুনা’ নামে উপজেলা চায় চরঅঞ্চলের ৬ ইউনিয়নবাসী

ওসি প্রদীপ-লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় প্রকাশ

১০

রাবি শিক্ষার্থীর উপর হামলার প্রতিবাদে দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ

১১

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ সমর্থন করে না বাংলাদেশ: উপদেষ্টা ড. খলিলুর

১২