অসংক্রামক রোগের বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতিতেই হোক এবং যতই চ্যালেঞ্জিং হোক, আমাদের সুস্থ সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতেই হবে।’
আজ বুধবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা বৃদ্ধির নিমিত্ত ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু নিয়ে আমরা সবাই আজ একত্রিত হয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ বলছি এ কারণে যে, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে দক্ষ ও কর্মক্ষম মানবসম্পদ দরকার। দক্ষ ও কর্মক্ষম মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে না পারলে ব্যক্তিগত জীবন থেকে জাতীয় উন্নয়ন-কোনোটিই যথাযথভাবে করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অসংক্রামক রোগ দিনদিন বিস্তৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিপুল জনগোষ্ঠীর ছোট এলাকায় বসবাসের প্রেক্ষাপটে এ পরিস্থিতি আরও সংকটময়। তাই এটি জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা শুধু স্বাস্থ্যখাত নয়, আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের সঙ্গেও নিবিড়ভাবে জড়িত।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর শতকরা ৭১ শতাংশ ঘটে থাকে অসংক্রামক রোগের কারণে এবং এর মধ্যে শতকরা ৫১ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় ৭০ বছর বয়সের নিচে, যাকে আমরা অকাল মৃত্যু হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। আমাদের ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যয় (আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার) ৬৯ শতাংশ, যার বেশির ভাগ অসংক্রামক রোগের জন্য ব্যয় হয়।’
অসংক্রামক রোগ হলে মানুষ উচ্চ চিকিৎসা ব্যয়ের মুখোমুখি হতে বাধ্য হয় বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির ক্যানসার হলে তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হয় এবং প্রায় ক্ষেত্রেই সহায়হীন-সম্বলহীন হয়ে পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে অতি উচ্চ মূল্যে চিকিৎসা নেওয়ারও প্রয়োজন হয়। আমাদের বিপুল অঙ্কের টাকা চলে যায় বিদেশে, এ সব রোগের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা যেমন উন্নত হওয়া জরুরি, তেমনি রোগগুলো যেন কম হয় অথবা না হয়, সেজন্য উপযুক্ত জনসচেতনতা এবং প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করে তোলা দরকার। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এজন্য সব মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা দরকার।’
খাদ্য, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার, গণপূর্ত এমন প্রতিটি খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘প্রতিটি খাত থেকে দরকার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও নিবিড় উদ্যোগ। তাই এসব মন্ত্রণালয় চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে যৌথ ঘোষণাপত্রে ৩৫টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ স্বাক্ষর করেছে। পরে প্রধান উপদেষ্টা পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবদেরর হাতে ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ তুলে দেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। ঘোষণাপত্রে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টজনিত অসুখসহ অসংক্রামক রোগ ইতোমধ্যে দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে যৌথ ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।